দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: ট্রাম্পের খামখেয়ালি শুল্কযুদ্ধে ভারতের বিদেশনীতি নতুন মোড় নিচ্ছে। হোয়াইট হাউসের ‘গাজোয়ারি’তে বিরক্ত দিল্লি ক্রমশ আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে সময় পরীক্ষিত বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে। বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে চিন-ভারত-ইরান অক্ষ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে মস্কো। এই পরিস্থিতিতেই বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অস্বস্তিতে ফেলে দিল্লি থেকে বড় ঘোষণা করলেন ‘ভারতবন্ধু’ রাশিয়ার দূত রোনাম বাবুশকিন। তিনি জানান, আমেরিকা যদি ভারতীয় পণ্য কেনায় অনীহা দেখায়, তবে রাশিয়া নিজস্ব বাজার ভারতের জন্য উন্মুক্ত করবে। পাশাপাশি, ভারতকে নিয়মিত অশোধিত তেলের সরবরাহও নিশ্চিত করা হবে।
ভারতের উপর রুশ তেল কেনায় মার্কিন শুল্ক আরোপকে তীব্রভাবে সমালোচনা করলেন ভারতে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত রোমান বাবুশকিন। দিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের এই ‘শুল্ক-শাস্তি’র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এই মার্কিন চাপ একতরফা এবং সম্পূর্ণ অন্যায্য। আমেরিকা অর্থনীতিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।” উল্লেখযোগ্যভাবে, চলতি বছরের শেষেই ভারত সফরে আসছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আসন্ন মোদি-পুতিন বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব।
এদিন আমেরিকাকে সরাসরি আক্রমণ করে বাবুশকিন বলেছেন অর্থনীতিকে হাতিয়ার বানিয়েছে আমেরিকা। তাঁর হুঁশিয়ারি, “বন্ধুরা নিষেধাজ্ঞা চাপায় না। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ডলারের উপর ভরসা কমাচ্ছে।” ভারত-রাশিয়া বন্ধুত্ব সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ভারতে অশোধিত তেল পাঠানোর জন্য রাশিয়ার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে বলে দাবি তাঁর।
অন্যদিকে, ভারত-চিন বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছেন বাবুশকিন। দ্রুত ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের আশা প্রকাশ করেন তিনি। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই বৈঠকে ঠিক হয়, দুই দেশ সীমান্ত সমস্যা নিয়ে অবিলম্বে ‘যুক্তিসঙ্গত ও পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য’ সমাধান বের করতে উদ্যোগী হবে। চিনা বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই সৌহার্দ্য দিল্লি-বেজিং শীর্ষ পর্যায়ের যোগাযোগ পুনরায় শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা চুরমার হয়ে গিয়েছিল গালওয়ান সংঘর্ষ-সহ সীমান্ত নিয়ে একাধিক দ্বন্দ্বে।
মার্কিন ‘শুল্ক-শাস্তি’র আবহে চিন-ভারত-রাশিয়া বন্ধুত্বে নতুন জোয়ার ট্রাম্পের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হবে কি না তা সময় বলবে। কিন্তু বছরের শেষে মোদি-পুতিন বৈঠক ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে আরও ঘোলা জলে ফেলতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা।