Game

1 day ago

Inter Milan 0-5 PSG: ইন্টারকে গোলের মালা পরিয়ে ইউরোপ–সেরার মুকুট পিএসজির

Inter Milan 0-5 PSG
Inter Milan 0-5 PSG

 

দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক:  ১৪ বছর আগে কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপ পিএসজি কেনার পর রোপণ করা হয়েছিল স্বপ্নের বীজ। সেই স্বপ্নে তা দিতে অর্থ খরচ করা হয়েছে জলের মতো। লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপ্পে, নেইমাররাও যখন পারলেন না, ভেবে নেওয়া হয়েছিল পিএসজির ইউরোপ জয়ের স্বপ্ন বুঝি পূরণ হওয়ার নয়!

অলক্ষ্যে বসে হেসেছেন ভাগ্য-বিধাতা। বুঝি ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছিলেন এত দিন! ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’র মতো হয়ে আসা কোচ লুইস এনরিকে এসে অবশেষে আইফেল টাওয়ার আলোকিত করলেন পাঁচবার! আসলে প্যারিস শহর আগেই ঠিক করে রেখেছিল, মিউনিখের অ্যালিয়াঞ্জ আরিনায় চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে পিএসজি যতগুলো গোল করবে, ততবার আইফেল টাওয়ার আলোকিত করা হবে।

মিউনিখের ফাইনাল না দেখে থাকলে স্কোরলাইনটি এতক্ষণে নিশ্চয়ই আন্দাজ করে ফেলেছেন। ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে অবশেষে চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি ঘরে তুলেছে পিএসজি। প্রথমবারের মতো ইউরোপ–সেরা হওয়ার এই রাত ফরাসি ক্লাবটির ইতিহাসেই ‘গ্রেটেস্ট নাইট’।শুধু শিরোপা জয়ের জন্যই নয়, পিএসজি যেভাবে খেলেছে, সে জন্যও রাতটি অবিস্মরণীয়। ইউরোপের সেরা এ ক্লাব প্রতিযোগিতার ফাইনালের ইতিহাসে এর আগে কোনো দল ৫ গোলের ব্যবধানে জেতেনি। এনরিকের পিএসজি প্রথম দল হিসেবে সেটা করে জিতল ত্রিমুকট অর্থাৎ ট্রেবলও!কী ভাগ্য, ইন্টারেরও ‘ট্রেবল’ জয়ের সুযোগ ছিল মাস দেড়েক আগেও। শেষ পর্যন্ত কিছুই জেতা হলো না! রাতটাও আসলে তাদের ছিল না।

৯ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমানো মেয়ে জানার জন্য এবারের ইউরোপ–সেরার মুকুট জিততে চেয়েছিলেন পিএসজি কোচ এনরিকে। সৃষ্টিকর্তা শুধু তাঁর মনের এই ইচ্ছাই পূরণ করেননি, দ্বিতীয়বারের মতো তুলে দিলেন ‘ত্রিমুকুট’।এই রাত শুধুই পিএসজির নয়, এনরিকেরও!ফরাসি ক্লাবটির সামনে স্রেফ বালির বাঁধের মতো ধ্বসে পড়েছে ইতালিয়ান রক্ষণের প্রতিভূ ইন্টারের ডিফেন্স। ২০ মিনিটের মধ্যে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর প্রথমার্ধে গোল হজম করেনি ইন্টার। কিন্তু বিরতির পর ৬৩, ৭৩ ও ৮৬ মিনিটে আরও ৩ গোল হজম করার পথে সিমোনে ইনজাঘির দলকে দেখে মনে হয়েছে, বিরতির পরই হাল ছেড়ে দিয়েছে।

ইনজাঘি নিজেও কি হাল ছাড়েননি? ইতালিয়ান এ কোচ প্রথম দুটি গোল হজমের পর গায়ের কোট খুলে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। মাঠে শিষ্যরা যে দাঁড়াতে পারছিলেন না! তৃতীয় গোল হজমের পর উত্তেজনা মিইয়ে এসেছে ইন্টার কোচের। শেষ বাঁশি বাজতে বাজতে চুপচাপ। আগেই বুঝে ফেলেছিলেন, লাভ নেই।

১২ মিনিটে পিএসজি রাইটব্যাক আশরাফ হাকিমির গোলের ৮ মিনিট পর দ্বিতীয় গোলটি ফরোয়ার্ড দেজিরে দুয়ের। বিরতির পর ৬৩ মিনিটে দুয়ে তৃতীয় গোলটি করার পর ম্যাচে শুধু আনুষ্ঠানিকতাই বাকি ছিল। ৭৩ মিনিটে খিচা কাভারেস্কাইয়া ও ৮৬ মিনিটে মাইয়ুলুর গোল পিএসজির পক্ষ থেকে যেন সেই আনুষ্ঠানিকতারই শেষ উপহার!

ইনজাঘি ধীরে ধীরে যেমন নিশ্চুপ হয়েছেন, এনরিকে তেমনি জেগে উঠেছেন। এক একটি গোলে ডাগআউট থেকে আনন্দে একটু একটু করে বের হয়ে এসেছেন। চতুর্থ গোলের পর তো গায়ের জ্যাকেটটাই খুলে ফেললেন! বার্সেলোনার হয়ে ২০১৫ সালে ‘ট্রেবল’ জয়ে জানা মাঠেই ছিল তাঁর সঙ্গে। সেই মেয়েকে হারিয়ে অনেক দিন বিষাদে ডুবে থাকার পর এনরিকের জীবনে এটাই কি সেরা রাত? ধারাভাষ্যকারেরা সে কথাই বলছিলেন। নিকট অতীতে তাঁকে এভাবে আনন্দে ভাসতে দেখা যায়নি।

ধারাভাষ্যকারেরা অবশ্য আরও একটি কথা বলেছেন ম্যাচের শুরুতে।২০২০ সালে লিসবনের ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরেছিল পিএসজি। এবার সেই বায়ার্নের ঘরের মাঠ থেকেই জিতল শিরোপা। হাকিমির কাছে এই রাত তাই ঐতিহাসিক, ‘আমরা ইতিহাস গড়েছি। এই ক্লাবের ইতিহাসে আমাদের নাম লিখিয়েছি। অনেক দিন ধরেই ক্লাবের এটা প্রাপ্য ছিল। আমরা খুব খুশি।’

হাকিমিরা পিএসজিকে সেই প্রাপ্য বুঝিয়ে দিলেন ইউরোপের সেরা ক্লাব প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে একপেশে ফাইনাল উপহার দিয়ে।

পিএসজির সমর্থকেরা হয়তো চাইবেন, এই একপেশে রাত যেন কখনো না ফুরায়! অন্তত তাঁদের মনের ঘড়িতে এই রাতে কখনো ভোরের ঘণ্টা বাজবে না।

You might also like!