দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র দিবসগুলোর একটি। এই দিনটি গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বোধিলাভ (জ্ঞান লাভ) এবং মহাপরিনির্বাণ — এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্মরণে পালন করা হয়। এটি সাধারণত বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে (এপ্রিল-মে) পালিত হয়।প্রাচীন সনাতনী মতে এবং বিশ্বাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দিন তথা তিথি। মনে করা হয় এই তিথিতে পুণ্যসঞ্চয় করার সুবর্ণসুযোগ রয়েছে।
এই বছর বুদ্ধ পূর্ণিমা দৃক সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী আগামী ১১ই মে, রবিবার সন্ধ্যা ৬.৫৫ মিনিটে শুরু হবে। এই পুণ্যতিথি থাকবে ১২ই মে, সোমবার সন্ধ্যা ৭.২২ মিনিট পর্যন্ত। উদয় তিথি অনুযায়ী সেদিনই পালিত হবে বুদ্ধ পূর্ণিমা পার্বণ।
✨ ইতিহাস:
১. জন্ম: প্রায় ২৫০০ বছর আগে (৫৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে) লুম্বিনী (বর্তমানে নেপালে) রাজকুমার সিদ্ধার্থ গৌতমের জন্ম হয়। তিনি রাজা শুদ্ধোধনের পুত্র ছিলেন।
২. বোধিলাভ: সিদ্ধার্থ ২৯ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করে সত্যের সন্ধানে বের হন। বহু সাধনার পর বোধগয়া (ভারতের বিহার রাজ্যে) বোধিবৃক্ষের নিচে ধ্যান করে তিনি ৩৫ বছর বয়সে "বুদ্ধ" অর্থাৎ "জ্ঞানপ্রাপ্ত" হন।
৩. মহাপরিনির্বাণ: ৮০ বছর বয়সে কুশীনগরে (বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ, ভারত) গৌতম বুদ্ধ দেহত্যাগ করেন। বৌদ্ধ বিশ্বাস অনুযায়ী, তিনি তখন মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন — অর্থাৎ চক্রাকার পুনর্জন্মের বন্ধন থেকে মুক্তি পান।
✨ তাৎপর্য: ১. এই দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য আত্মশুদ্ধি, ধ্যান, দান ও পুণ্য অর্জনের দিন।
২. এই দিনে মানুষ বুদ্ধের শিক্ষা ও অহিংসার বার্তা স্মরণ করে।
৩. এই পুণ্যতিথিতে উপাসনালয়ে প্রদীপ জ্বালানো, পবিত্র গ্রন্থ পাঠ, দান-ধ্যান ও বুদ্ধের আবাহন করা হয়।
৪. সামাজিক সহমর্মিতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের শিক্ষাও এই দিনের মূল বার্তা।
✨ বুদ্ধ পূর্ণিমার পুণ্যতিথিতে পূর্ণিমার তাৎপর্য: গৌতম বুদ্ধের জন্ম বিশেষভাবে পূর্ণিমার আবির্ভাবের সাথে সম্পর্কিত, কারণ এটি তাঁর জীবনের তিনটি প্রধান ঘটনার একটি অংশ।তিনি পূর্ণিমার রাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তিনি পূর্ণিমার রাতে জ্ঞান লাভ করেছিলেন এবং ৪৫ বছর ধরে ধর্মোপদেশ ও শিক্ষা প্রদানের পর, তিনি ৮০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, পূর্ণিমার রাতেও নির্বাণ (নির্বাণ) অর্জন করেছিলেন। যে ব্যক্তি গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা অনুশীলন করে এবং তার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হয়, সে নিশ্চিতভাবেই শান্তিপূর্ণ এবং আধ্যাত্মিকভাবে সচেতন জীবনযাপন পালনের পথে এগিয়ে যায়। বুদ্ধ কখনও তাঁর নিজস্ব সম্প্রদায়কে তাঁর বানী প্রচার করার জন্য শিক্ষা দেননি, তিনি জীবনযাপনের এমন উপায়গুলি ভাগ করে নিয়েছিলেন যা আধ্যাত্মিক এবং বস্তুবাদী জগতের মধ্যে ব্যবধান দূর করে এবং একজন সাধারণ মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করতে সহায়তা করে।
বুদ্ধ পূর্ণিমা শুধু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য নয়, বরং মানব জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণার দিন। এটি অহিংসা, জ্ঞান ও মানবতার আদর্শকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এই দিনটি যেন আমাদের জীবনে শান্তি, সহানুভূতি ও সত্য অনুসন্ধানের আলো জ্বালিয়ে রাখে।