দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: হিন্দু ধর্মে প্রতিটি দেব-দেবীর নিজস্ব বাহন রয়েছে, যা তাদের শক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। যেমন, দেবী দুর্গার বাহন হলো সিংহ। কিন্তু মা দুর্গা কেন সিংহকে বেছে নিলেন? কেন এই হিংস্র পশুটি তাঁর বাহন হলো? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের পৌরাণিক কাহিনিতে ডুব দিতে হবে। এর পেছনে রয়েছে এমন এক গভীর তাৎপর্য, যা মা দুর্গার অমিত শক্তি ও সাহসের প্রতীক হিসেবে সিংহকে প্রতিষ্ঠা করেছে। এই বিশেষ সংযোগ দেবীর আরাধনাকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।
শিব পুরাণ অনুসারে মহিষাসুরকে বধ করতে যাওয়ার সময় দেবীকে সিংহ দান করেছিলেন ব্রহ্মা। সিংহ হল প্রচণ্ড শক্তি, প্রবল রাগ, আক্রমণাত্মক মনোভাব ও রাজকীয় আচরণের প্রতীক। মহিষাসুরকে বধ করতে দেবী চামুণ্ডা রূপ নিয়েছিলেন। তাই সিংহের শক্তি, রাগ ও আক্রমণের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল দেবীর রণহুংকার। সিংহের উপর আসীন দশ হাতে দশ অস্ত্র ধরা রণসজ্জিত দুর্গা আমাদের মনের সমস্ত পাপ ও অন্ধকার বিনাশ করার আহ্বান জানান।
সিংহের শক্তি, সাহস ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাই মিশে যায় ত্রিভূবনকে দেবীর রক্ষা করতে এগিয়ে আসার মধ্যে। মহিষাসুরের বিরুদ্ধে সহজে জয় পাননি দেবী। প্রচণ্ড যুদ্ধে তিনিও রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন। কিন্তু সে যুদ্ধে তিনি পিছু হটেননি। সমগ্র বিশ্বকে রক্ষা করার ভার নিয়েছেন যিনি, শরীর রক্তে ভেসে গেলেও তাঁকে নিজের কাজ সম্পূর্ণ করতেই হবে। এই সাহস, এই নেতৃত্বের শক্তির কারণে সিংহ ছাড়া আর কোনও প্রাণীকে দেবী দুর্গার বাহন হিসেবে মানায় না। মহিলারা সাধারণত কোমল প্রকৃতির হয়ে থাকেন। শক্তি, সাহস যেন পুরুষদেরই একচেটিয়া। এই ধারণাকেই নস্যাত্ করে দেবী মুখোমুখি যুদ্ধে পরাজিত করেন প্রবল পরাক্রমশালী মহিষাসুরকে। সিংহের পিঠে মা দুর্গার অবস্থান তাঁর এই সাহস ও শক্তিকে পূর্ণতা দেয়।