দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, দেবী দুর্গা হলেন এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত শক্তির সম্মিলিত রূপ। পণ্ডিতদের মতে, দেবী দুর্গার শক্তির বিকাশ ঘটেছিল চতুর্থ থেকে পঞ্চম খ্রিস্টাব্দে রচিত মার্কণ্ডেয় পুরাণ ও শ্রীশ্রী চণ্ডী তে। যদিও তাঁর উল্লেখ মহাভারত, বিষ্ণু পুরাণ, হরিবংশ, দেবী পুরাণ, ভাগবত ও বাসনপুরাণের মতো প্রাচীন গ্রন্থগুলোতেও পাওয়া যায়। মহাভারতের বিরাটপর্ব ও ভীষ্মপর্বেও দুর্গাস্তব আছে। বিশেষ করে, ভীষ্মপর্বের ২৩তম অধ্যায়ে অর্জুন দেবী দুর্গার স্তব পাঠ করেছিলেন। এ ছাড়া, বিষ্ণু পুরাণের পঞ্চম অংশে দেবকীর গর্ভে দুর্গার জন্ম নেওয়ার কাহিনি বর্ণিত আছে। শ্রীশ্রী চণ্ডীতে তাঁকে জগৎপালিকা আদ্যাশক্তি ও সনাতনী রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।
পুরাকালে মহিষাসুরের অত্যাচারে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে দেবতারা শ্রীবিষ্ণু ও মহাদেবের কাছে সাহায্যের জন্য় উপস্থিত হন। প্রবল পরাক্রমশালী মহিষাসুরকে বধ করার জন্য সব দেবতার তেজ থেকে এক অপূর্ব নারীর সৃষ্টি হয়। দেবতারা তাঁকে নিজেদের অস্ত্র ও অলংকার দিয়ে সজ্জিত করেন। এই নারীই মহিষাসুরকে যুদ্ধে আবাহন করেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ত্রিশূল দিয়ে গেঁথে মহিষাসুরকে বধ করেন দুর্গা। এছাড়া মধু কৈটভ, শুম্ভ-নিশুম্ভকেও পরাজিত করেন তিনি।
শ্রীশ্রী চন্ডীতে বর্ণিত আছে, প্রাচীনকালে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য সর্বহারা হয়ে নিজেদের সবকিছু ত্যাগ করে বনে যান। সেখানে তাঁরা এক মুনির দেখা পান। মেধা মুনি নামে ওই ঋষি সব শোনার পর তাঁদের বলেন “বিশ্ব সংসারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জগতের পালন কর্তা বিষ্ণুর যে মহামায়া শক্তি তারই প্রভাবে এই রকম হয়। সেই মহামায়া প্রসন্না এবং বরদা হলে মানবের মুক্তি লাভ হয়।” মুনির উপদেশ পেয়ে সুরথ ও সমাধি মাটির প্রতিমা গড়ে ৩ বছর কঠোর তপস্যার পর দেবী তুষ্ট হয়ে তাঁদের দেখা দেন এবং মনোবাঞ্ছনা পূর্ণ করেন। পরে বসন্তকালকে দুর্গাপূজার উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করে বাসন্তী পূজার প্রচলন করেন।
রামায়ণ অনুসারে শারদীয়া দুর্গাপুজো বা অকাল বোধনের সূচনা করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। তিনি রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য লংকা অভিযান করার আগে অকাল বোধন করে শরত্কালে মা দুর্গার পুজো করেন। রামচন্দ্রের আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে বর দেন দেবী। দেবীর দশহাতে ত্রিশূল, খড়গ, সুদর্শন চক্র, ধনুবার্ন, শক্তি খেটক, পূর্নচাপ, নাগতালা, অংকুশ ও পরশু এ ধরনের অস্ত্র দেখা যায় বলে তিনি দশ প্রহরণ ধারিত্রী।