প্রীতম সাধুখাঁ, হুগলী :নব্বই দশকের শেষের দিকে ট্রেড ইউনিয়ন গুলির জঙ্গি আন্দোলনের ঠেলায় পাততাড়ি গুটিয়ে নেন একাধিক মালিক গোষ্ঠী।বন্ধ কলকারখানার জমি বিক্রি ও বহুতল নির্মান কে কেন্দ্র করেই হুগলি শিল্পাঞ্চলের গঙ্গা তীরে শুরু হয় মস্তানদের দাপাদাপি।রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয়ে বাম জমানার শেষ দিকে মস্তানরা চুটিয়ে তোলা বাজি শুরু করে। রাজ্যে পালাবদলের পর রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যেতেই মস্তানেরা তোলাবাজির ধরন পালটে দেয়।ধমকে চমকে ভয় দেখিয়ে প্রমোটার,ব্যবসায়ীদের থেকে বহুতল তথা ফ্ল্যাটে স্কোয়ার ফুট মেপে তোলা আদায় করতে থাকে।এ ছাড়া এলাকায় মদ,জুয়া,সাট্টার ঠেক থেকে হপ্তা আদায় নিয়েও দুষ্কৃতীদের মধ্যে মারপিট খুনোখুনি লেগেই ছিল।তার জেরে জেল, আদালত সব কিছুকে এড়িয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছিল দুষ্কৃতীরা।অনেকে আবার ঘর সংসার পেতে ছিল।তোলাবাজির কালো টাকা সাদা করতে মস্তানেরা বহুতল ব্যবসায় নাম লেখায়। এই ব্যবসা ও চলছিল জোর কদমে।অনেক দুষ্কৃতীরা আবার আড়ালে থেকে প্রমোটারদের মাধ্যমে টাকা খাটিয়ে বহুতলের ব্যবসা করে সমাজে ভদ্রলোকের মুখোশ পড়ে আছে।সেই কারণেই কুখ্যাত দুষ্কৃতীরা কেউ আর সরাসরি খুন জখমের জড়াচ্ছে না।তবে দুষ্কৃতীরা বকলমে ব্যবসা করলেও আদতে তাদের মধ্যে দুষ্কর্ম করার প্রবৃত্তি থেকেই যায়।সেই কারণেই কখনো ভাড়াটে খুনি বা নিজের সাঙ্গপাঙ্গর মারফৎ খুন জখম করে এলাকায় নিজের প্রভাব ভয় ভীতির পরিবেশ কায়েম রাখে বলে পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন।
নব্বই দশকের গোড়ায় বাম জমানায় গঙ্গা তীরের চটকল ও এনটিসির মতো বড় বড় কলকারখানাগুলি ধুকতে থাকে। ট্রেড ইউনিয়ন গুলির জঙ্গীপনা ও কাজ না করার মানসিকতার কারণে মালিকেরা কারখানা বন্ধ করে দেন।১৯৯৫ সালে কোন্নগর বন্ধ কারখানার যন্ত্রাংশ চুরি করে বিক্রির মধ্যে দিয়ে অপরাধ জগতে জাকিয়ে বসে হুগলি শিল্পাঞ্চলের ত্রাস শ্যামল দাস ওরফে হুব্বা।রেলের ওয়াগন ভাঙার থেকে বন্ধ কলকারখানা থেকে চুরি করা অনেক কম ঝুঁকির।তাতে অনেক বেশি টাকা কামানো যায়।কোন্নগর চটকল লাইনের অবাঙালি রমেশ মাহাতো,নেপু গিড়ি,আক্রম,চিকুয়া, নিয়ে দল তৈরি করে হুব্বা।অপরাধ জগতে শ্যামলের চিরশত্রু কানাইপুরের ভোলানাথ দাস ওরফে বাঘা তার ভাই বিশা,শশাদের নিয়ে দল তৈরি করে।হুগলির দুই মস্তানরাই বারাসত,বনগা,উত্তর চব্বিশ পরগনায় নিজেদের জাল বিস্তার করে নেয়।২০০০ সাল থেকে বন্ধ কলকারখানার জমিতে বহুতল তৈরির ব্যবসা শুরু হয়।সেই নিয়েই হুব্বার সঙ্গে বাঘার সংঘাত শুরু হয়।২০০০ সালে বাঘা হুব্বা শ্যামলের দুই শাগরেদ হারু ও ইন্দ্র কে কুপিয়ে খুন করে বাঘা।যদিও জোড়া খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় বাঘা।তারপর থেকে কলকাতা,দুই চব্বিশ পরগনা,হুগলি ও বর্ধমানে হুব্বা শ্যামলের দাপট বাড়তে থাকে।তোলাবাজির টাকায় বৈদ্যবাটি শ্রীরামপুরে জলকলের একটি প্রকল্পের কাজের বরাত নেয় হুব্বা শ্যামল,রমেশ, নেপু গিড়িরা।কিন্তু ওই প্রকল্পের টাকার ভাগ হুব্বা রমেশ ও নেপু কে দেয়নি।সেই আক্রোশেই রমেশ মাহাতো ও নেপু গিড়ির হাতে নৃশংস ভাবে খুন হয় হুব্বা শ্যামল।তারপর নেপু ও রমেশ দীর্ঘদিন জেলে ছিল।বর্তমানে রমেশ মাহাতো বহুতলের ব্যবসা করছে ও নেপু গিড়ি শিলিগুড়িতে রয়েছে।জমির দালালির ব্যবসা নিয়েই ছিল বাঘা, বিশারা।কিন্তু বিপুল পরিমান জমি বিক্রি করার ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল কানাইপুর পঞ্চায়েতের সদস্য খুন হয়ে যাওয়া পিন্টু চক্রবর্তী। জমির বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি নে মেলায় শিল্পপতির কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েও জমি বেচতে পারছিল না।সেই আক্রোশেই তৃণমূল নেতা কে কুপিয়ে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়, এমনটাই প্রাথমিক অনুমান।
পুলিশের এক কর্তা বলেন আগে যারা মস্তানি করত, তারা এখন বেশির ভাগই বড় ব্যবসায়ী হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে আঘাত লাগলেই দুষ্কৃতি দিয়ে মানুষকে ভয় দেখায় তারা এমনকি অপরাধ করতেও পিছপা হয় না তারা। সম্প্রতি কোন্নগর কানাইপুরের তৃণমূল নেতা খুনের পিছনে এই রসায়ন কাজ করছে বলে প্রাথমিক তদন্ত সূত্রে জানা যায়।।