দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ শহরের তাবড় চিত্রশিল্পীরা দক্ষিণ কলকাতার মিডলটন আর্ট গ্যালারির প্রদর্শনী নিয়ে ক্ষুব্ধ। এই তালিকায় রয়েছেন গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ ছত্রপতি দত্ত, শিল্প সমালোচক প্রণবররঞ্জন রায়, খ্যাতনামা শিল্পী হিরণ মিত্র, তাপস সরকার, পার্থ রায়ের মতো দিগগজরা। শহরের শিল্পীরা মঙ্গলবার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের কনফারেন্স রুমে একজোট হয়েছিলেন। তাঁরা যামিনী রায়ের এই প্রদর্শনী দেখে হতবাক। কেউ কেউ বলছেন ছবির তলায় যে স্বাক্ষর রয়েছে সেটিই তো গণ্ডগোলের। কারও মন্তব্য, ‘‘যে ধরনের কাগজের উপর ছবিগুলি আঁকা তেমন কাগজে কক্ষণও আঁকতেন না ‘পদ্মভূষণ’ শিল্পী।’’ ১৯৭৬ সালে ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া যামিনী রায়ের সৃষ্টিকে জাতীয় সম্পদ বলে ঘোষণা করে। বিতর্কিত প্রদর্শনী নিয়ে তাই সরব হচ্ছেন শিল্পীরা।
এ বিষয়ে সই সংগ্রহ করে ঘটনার বিবরণ দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখিকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। শিল্পী পার্থ রায় বলেন, “আমি ওই প্রদর্শনী দেখেছি। কতগুলি ছবি রয়েছে যার চরিত্রগুলো যামিনী রায়ের আঁকার সঙ্গে একেবারেই মিলছে না।” হিরণ মিত্রর বক্তব্য, “এই প্রদর্শনী দেখিনি। তবে এই প্রদর্শনীর পোস্টারটি দেখেছি। অনেকগুলি ছবির কোলাজ রয়েছে। ১৯৬২ সালে যামিনী রায়ের বাড়িতে নিয়মিত যেতাম। ওঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। ওঁর প্রচুর কাজ চুরি হয়েছে। ছবিগুলি দেখে খুব সিন্থেটিক মনে হচ্ছে। যদি কেউ নকল করে থাকেন তাঁরা তো যামিনীবাবুর আমলে জন্মাননি। তাঁরা সিন্থেটিক কাজই করেন। এটা নিয়ে চুপ থাকা উচিত নয়। যখন এতগুলো মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে তখন একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই বিষয়টা যেন থিতিয়ে না পড়ে। এটা নিয়ে তর্ক চলুক।”
শিল্পী সপ্তর্ষি ঘোষ জানিয়েছেন, যামিনী রায়ের ছবি অত্যন্ত বিখ্যাত। সেসব ছবির দৈর্ঘ্য, প্রস্থও বদলে গিয়েছে প্রদর্শনীতে। যেটা আকারে বর্গক্ষেত্র সেটা হয়ে গিয়েছে লম্বাটে। মিডলটন আর্ট গ্যালারিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সংগ্রাহক কৌন্তেয়া সিনহা এবং ঐন্দ্রিলা রায় কাপুর কোনও এক ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে গোটা চল্লিশ ছবি নিয়ে এসেছেন। সূত্রের খবর, কমলকুমার পারেখ নামে আর্টের সমঝদার এই ছবিগুলির মালিক। তিনিই চেয়েছেন প্রদর্শিত করতে।
পারেখ কোত্থেকে পেয়েছেন ছবিগুলি? ঘনিষ্ঠ বৃত্তে তিনি জানিয়েছেন, এই সব ছবি তিনি কিনেছেন সংঘমিত্রা রায় আর অশোক রায়ের কাছ থেকে। যামিনী রায়ের ছোট ছেলে অমিয় রায়ের কন্যা সংঘমিত্রা। সূত্রের খবর, দাবি করা হচ্ছে ১৯৯৩ সালে গ্র্যান্ড হোটেলের এক প্রদর্শনী থেকে এই ছবিগুলি কেনা হয়েছিল। শিল্পীরা বলছেন, তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ১৯৯৩ সালে এমন কোনও প্রদর্শনীর হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না।