দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ শাহজাহান শেখের বিরুদ্ধে আমদানি-রফতানি সংক্রান্ত একটি মামলায় তদন্তের সূত্রে সন্দেশখালির একাধিক জায়গায় হানা দিলেন ইডি আধিকারিকেরা।রাস্তাঘাটে টহল দিচ্ছে পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানেরা। শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারির পর ফের বড়সড় তল্লাশি অভিযানে নেমেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সূত্রের খবর, শাহজাহানের আমদানি-রফতানি ব্যবসা-সহ একাধিক মামলার তদন্তের জন্যই বৃহস্পতিবারের এই তল্লাশি অভিয়ান। শাহজাহানের টাকার উৎস জানতে তার তিন ঘনিষ্ঠ সহচরের বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছেন ইডির অফিসারেরা।
এদিন সকালে শেখ শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ আইনুর মোল্লার বাড়িতে আগে যান ইডির অফিসাররা। ইডির তল্লাশির আগেই আইনুলের বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তারপর একে একে নজরুল মোল্লা, জামালউদ্দিন মোল্লা, আরসাদ মিয়া-সহ শাহজাহানের বাকি সাগরেদদের বাড়িতে তল্লাশি শুরু হয়। প্রায় শতাধিক কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা রয়েছেন এদিনের অপারেশনে।
ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, সন্দেশখালির মোট তিনটি জায়গায় একই সঙ্গে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ধামাখালির যে বাজার ঘিরে রেখে তল্লাশি চলছে, সেখানে কাঁকড়া, চিংড়ি মাছের পাইকারি ব্যবসা চলত। মাছব্যবসায়ী ছাড়াও ইমারতি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এক ব্যবসায়ীর বাড়িতেও তল্লাশি চলছে।
সন্দেশখালিতে শাহজাহানের একাধিক মাছের ভেড়ি রয়েছে। সেখানে অন্যান্য মাছের সঙ্গে চিংড়ির চাষও হত। সেই সুবাদেই শাহজাহান ঘনিষ্ঠ কয়েকজন চিংড়ি ব্যবসায়ীর বাড়িতে আগেও হানা দিয়েছিল ইডি। আজও তেমন কয়েকজনের বাড়িতে তল্লাশি চলছে বলে খবর। জানা গেছে, আইনুর ও জামালউদ্দিন মোল্লা সম্পর্কে দু’জন ভাই। এই দু’জনের সঙ্গেই শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, শাহজাহান শেখের বিরুদ্ধে আমদানি-রফতানি সংক্রান্ত একটি মামলায় তদন্তের জন্যই নাকি সেখানে হানা দিয়েছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দাদের কাছে খবর ছিল ব্যবসার আড়ালে বেনিয়ম হচ্ছে। মাছের আমদানি-রফতানি করার আড়ালে বিপুল পরিমাণে টাকা তছরুপের অভিযোগও উঠেছে। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে ইসিআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে ইডি। তল্লাশি চলে হাওড়া, কলকাতা সহ একাধিক এলাকায়।
বৃহস্পতিবার শেখ শাহাজাহান ঘনিষ্ঠ মাছ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সকলের বাড়িতে একে একে তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। ধামাখালির কাছে একটি মাছের পাইকারি বাজার ঘিরে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে, নদীর পাড় ঘিরে রেখেছেন বিএসএফ জওয়ানেরা।
রেশন ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল ইডি। ওই দিন ইডি তাঁর বাড়িতে ঢুকতেই পারেনি। বাড়ির বাইরে ইডি আধিকারিকদের মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, সে দিন বাড়িতেই ছিলেন শাহজাহান। পরে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান। দ্বিতীয় বার শাহজাহানের বাড়িতে তালা ভেঙে ঢোকে ইডি। ফাঁকা বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পর বাড়িটি সিল করে দিয়ে যায় ইডি। তারপরেই সন্দেশখালিতে আগুন জ্বলে ওঠে। শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করার দাবি জানিয়ে রাস্তায় নামেন স্থানীয় লোকজন। থানা ঘিরে চলে বিক্ষোভ। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান মহিলারাও। শাহাজাহান ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে অত্যাচার, মারধর, মহিলাদের শ্লীলতাহানি করার অভিযোগও ওঠে। সন্দেশখালিতে দফায় দফায় গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। নিজের চোখে পরিস্থিতি দেখে আসেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। তারপর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ধরা পড়ে শেখ শাহজাহান। আপাতত, সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন তিনি।