দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :১৯ জুন থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত টানা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ঝরছে বৃষ্টি পুরুলিয়ায়। ২৯ তারিখ এক দিনের বিরতি মিললেও, তার পর থেকেই ফের শুরু হয়েছে ধারাবাহিক বর্ষণ। এই অবারিত বৃষ্টিতে কার্যত দিশেহারা মৃৎশিল্পীরা। কাদায় ভিজে নষ্ট হচ্ছে প্রতিমা তৈরির মাটি, পাশাপাশি কাঁচামালের দামও হু হু করে বাড়ছে, ফলে টান পড়েছে মূলধনে। একদিকে বৃষ্টির জোরা ফলা, অন্যদিকে বাড়তি খরচ—সব মিলিয়ে বিপাকে প্রতিমাশিল্পীরা। দুর্গা প্রতিমার কাজ শুরু তো দূর, বিশ্বকর্মা প্রতিমা গড়তেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের।
জুন-জুলাই মাসে পুরুলিয়ায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৫১.৪০ মিলিমিটার। সেই জায়গায় ওই দু’মাসে পুরুলিয়ায় বৃষ্টি হয়েছে, ১০৪৯. ৫৫ মিলিমিটার। প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি বৃষ্টিতে মনসা পরবে যেন আঁধার দেখছেন জেলার মৃৎশিল্পীরা। পরবের খুশি যেন উবে গিয়েছে এই সাবেক মানভূমে! আগামী ১৭ আগাস্ট মনসা পুজো। জঙ্গলমহলের এই জেলায় এই পুজো অন্যতম বৃহৎ উৎসব। পুজোর পরদিন শুধুমাত্র বলিদানের মাংস খাওয়ার জন্য এই জেলা অলিখিত বনধ থাকে। কিন্তু সাবেক মানভূমের সেই বৃহৎ উৎসবে মাথায় হাত মৃৎশিল্পীদের।
সোমবার পুরুলিয়া শহরের রথতলায় মৃৎশিল্পীদের তল্লাটে গিয়ে দেখা গেল একের পর এক মনসা প্রতিমা অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দরজার বাইরে থাকা প্রতিমা গুলিতে প্লাস্টিক, ত্রিপল দিয়ে ঢাকা। মৃৎশিল্পীদের কথায় “এমন বৃষ্টি তারা কোনোদিনও দেখেনি"। শুনলাম এই জেলায় ১০ বছরের রেকর্ড এবার ভেঙে গিয়েছে। বৃষ্টির জন্য কাঁচামালের দাম এত বেড়ে গিয়েছে যে, আমরা সমস্যায় পড়ে গিয়েছি। বরাত এলেও মূলধনে টান পড়ায় সবচেয়ে সমস্যা হয়েছে।”
একজন শিল্পী মনসা পূজোর সময় যারা ৮০ থেকে ৯০ টি প্রতিমা তৈরি করেন। তারা এবার ৪০ থেকে ৬০-র বেশি প্রতিমার বরাত নেননি। গরুর গাড়িতে করে নিয়ে আসা মাটির দাম যেমন বেড়ে গিয়েছে । তেমনই বেড়েছে খড়ের দাম। আগে ৫০০ টাকাতেই এক গরুর গাড়ি মাটি মিলতো। কিন্তু এবার আর বৃষ্টিতে তা হচ্ছে না। ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা নিচ্ছে। গত বছর এক কিলো খড় বিক্রি হয়েছে ১ টাকা ২৫ পয়সা দরে। এবার সাড়ে তিন টাকা কিলো। যে দড়ি ৯৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো। সেই দড়ির দাম এবার ১৪০ টাকা। পুরানো একটি শাড়ির দাম ছিল ২০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা। মৃৎশিল্পীদের কথায়, “প্রতিমা সজ্জার জন্য কুমোরটুলিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে মাথার মুকুট, চুল, বিভিন্ন রঙ, শাড়ির দাম প্রায় দ্বিগুণ। আসলে এই জিনিসগুলি যে এলাকায় তৈরি হয় সেখানে জলমগ্ন। তাই এমন দাম বেড়ে গিয়েছে।”
মৃৎশিল্পীদের কথায়, “বৃষ্টি থেকে মাটির প্রতিমা তৈরি বাঁচাতে আমি ৩০০০ টাকার ত্রিপলই কিনেছি। যে কটা বিশ্বকর্মা প্রতিমার বরাত নিয়েছি সে কটা সময়মতো শেষ করতে পারবো কিনা বুঝতে পারছি না।’’ শিল্পীদের কথায়, ‘‘তাদের কষ্ট বুঝবে কে? পুরসভা একটা ত্রিপল পর্যন্ত দেয় না।’’ তাদের এই দুঃখ-দুর্দশা যদি প্রশাসন বোঝে তাহলে অনেকটাই উপকৃত হবেন তাঁরা।