দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :মন্দিরে ঈশ্বর সেবার অধিকার কি কেবল পুরুষদের জন্যই? সমাজে বহুদিন ধরে চলে আসা এই ধারণাকে অনেক আগে থেকেই ভেঙে দিয়েছেন নন্দিনী ভৌমিক, রোহিণী ধর্মপালের মতো পথপ্রদর্শকরা। তাঁদের সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করেই ওয়াশিংটনের সিয়াটেলে ‘ঐক্যতান’ ক্লাব এ বছর দুর্গাপুজোয় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এখানে উমার আরাধনা হচ্ছে নারীদের হাতেই। পূজার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা গঙ্গোপাধ্যায় ও অন্বেষা চক্রবর্তী। নারীশক্তির এই বিশেষ উদ্যোগে শারদোৎসব যেন পেয়েছে নতুন মাত্রা। প্রবাসে থেকেও দুর্গাপুজোর ঐতিহ্যকে নতুন করে ছুঁয়ে দেখছে সিয়াটেল। চলুন দেখে নেওয়া যাক কীভাবে চলছে প্রবাসের আয়োজন।
শারদ মরশুমের ঘন কাশবন সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেই বটে, তবে আগমনী সুরে মাতোয়ারা হয় ‘ঐক্যতান’ও।
পুজোর তিলোত্তমা থেকে দূরে থেকেও যেন উমার টানেই অনেকটা শিকড়ের কাছাকাছি ওয়াশিংটনের সিয়াটেল। কলকাতার মতো সেখানেও শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে।ওয়াশিংটনের সিয়াটেলের ঐক্যতান ক্লাব এবার পাঁচ বছরে পা দিল। তবে নবীন পুজো কমিটি হলেও আয়োজনের আড়ম্বর কোনও অংশে কম নয়।
পাত পেড়ে অষ্টমীর খিচুড়ি ভোগ খাওয়া থেকে নবমীতে কবজি মাটন খাওয়া, আড্ডা দেওয়া, নাচেগানে জমে ওঠে সিয়াটেলের এই ক্লাবের পুজো। বছর তিনেক আগে একেবারে ঘরোয়াভাবেই বাড়ির পুজো হিসেবে শুরু হয়েছিল ঐক্যতানের উমা আরাধনা। কিন্তু এখন সেখান থেকেই সিয়াটেলের বাঙালিদের একসূত্রে বেঁধে গুটি-গুটি পায়ে ঐক্যতানের পুজোর কলেবর বেড়েছে।
বিদেশ-বিভুঁইয়ে থেকে যাতে পুজোর আমেজ মিস না করেন বাঙালিরা, সেই জন্য ব্যবস্থাপনাও বেশ জমজমাট। হাজারের কাছাকাছি মানুষজন জড়ো হন ঐক্যতানের পুজোয়। প্রতিমাসজ্জা থেকে শুরু করে মন্ডপসজ্জা, হাতে হাতে সবটা নিজেরাই সারেন। উমা আগমনের মাসখানেক আগে থেকেই চলতে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া। দুর্গাপুজোর কনসার্ট এখানে বড় চমক। এবার ঐক্যতানের তরফে আমন্ত্রিত সাহানা বাজপেয়ী এবং সামন্তক সিনহা। আদ্যোপান্ত বাঙালিয়ানা বজায় থাকে এখানকার দুর্গাপুজোয়। ঘরের মেয়ে উমাকে প্রকৃতি মায়ের মতোই আরাধনা করা হয়। শারদোৎসব স্পেশাল মেনুতে কী কী রয়েছে? জম্পেশ বাঙালি মেনুর কথা বললেন পুরোহিত তথা প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। শনিবার থাকছে- আলাপে খিচুড়ি, লাবড়ার মহিমা, ঝুরঝুরে আলুভাজা, টমেটো খেজুরের চাটনি, পাঁপড় ভাজা, লালচে-কালচে মিষ্টি। আর রবিবার মিষ্টি পোলাও সহযোগে গোলবাড়ির কষা মাংস, কাশ্মিরী আলুরদমের মতো পদ। শেষপাতে আমের টক, চমচমে মিষ্টিমুখ।
ঐক্যতানের মহিলা সদস্যরাই এই দুর্গাপুজোর দায়িত্বে থাকেন। যেখানে নারীশক্তির আরাধনায় নারীরা, সেখানে নিয়মমাফিক সব রীতি-রেওয়াজ পালন হয়।
কলকাতা থেকে দূরে থাকায় যেহেতু পুজো বা যে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠানে পরিবার, স্বজনদের ভীষণ মিস করেন সকলে, তাই সেখানকার মানুষেরা এখানে পাড়ার আমেজটা বজায় রাখার চেষ্টা করে। তাঁরা শুধু দূর্গাপুজোর সংস্কৃতি মন্ত্র আওড়ানোয় বিশ্বাসী নয়। বরং মন্ত্রগুলোর সহজ অর্থ করেই পাঠ কোরেন তাঁরা। অনেকটা গল্পের মত করেই সাজিয়ে বলে! প্রবাসে ওয়াশিংটনের সিয়াটেলে ‘ঐক্যতান’ ক্লাবে পুজোর একটা বিশেষ রীতি রয়েছে। সেটা হল- সন্ধিপুজোর সময়ে ১০৮ টি প্রদীপ জ্বেলে ১০৮ জন নারী একত্রিত হয়ে আরতি করেন।”