Festival and celebrations

3 hours ago

Durga Puja fashion 2025:বারো হাতের বালুচরিতে রামায়ণের কাহিনি, পুজোর ফ্যাশনে বিষ্ণুপুরের ছোঁয়া

Bishnupur’s artistic touch in Durga Puja fashion
Bishnupur’s artistic touch in Durga Puja fashion

 

দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :দুর্গাপুজোর কেনাকাটায় এ বার বিশেষ নজর কাড়ছে বিষ্ণুপুরের বালুচরি। ঐতিহ্যবাহী এই শাড়ির নকশায় এ বছর বোনা হয়েছে এক মহাকাব্যের কাহিনি—রামায়ণ। শিল্পী অমিতাভ পালের হাতে তৈরি এই অনন্য সৃষ্টি কেবল পোশাক নয়, বরং বস্ত্রশিল্পের মাধ্যমে ইতিহাস আর সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখার এক অভিনব প্রয়াস।

প্রতি বছরই তিনি তাঁর বালুচরিতে ফুটিয়ে তোলেন সাহিত্য, সংস্কৃতি কিংবা লোকজ কাহিনির রূপ। কখনও শকুন্তলার গল্প, কখনও আবার আদিবাসী নৃত্যচিত্র উঠে এসেছে তাঁর বুননে। এ বছর সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই তিনি তুলে এনেছেন বাল্মীকির রামায়ণকে। শাড়ির আঁচল থেকে শুরু করে জমি, বর্ডার, পল্লু—সবখানেই যেন এক চলমান মহাকাব্য।

রঙিন সুতোয় ফুটে উঠেছে রাবণকে থামাতে আসা জটায়ুর লড়াই, যজ্ঞের অশ্বকে আটকানো লব-কুশের বীরত্ব, বাল্মীকির আশ্রমে তাঁদের পাঠগ্রহণ, বনবাসে রাম-সীতা-লক্ষ্মণের যাত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। সাত কাণ্ডের ধারাবাহিক কাহিনি যেন সুতোয় বোনা রূপকথার মতো প্রাণ পেয়েছে এই বালুচরিতে।

এই বিশেষ শাড়ির মূল্য ধার্য করা হয়েছে দেড় লক্ষ টাকা। তবে দাম কেবল সময় আর সুতোয় গাঁথা নয়, এর সঙ্গে মিশে আছে এক মহাকাব্যের চিত্রায়ণ, এক শিল্পীর মেধা আর সৃষ্টিশীলতার অমূল্য ছাপ।
পুরো শাড়িটি যেন এক চলমান চিত্রকাহিনি, যেখানে চোখ বোলাতেই গল্পের ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে পারেন। শিল্পী  অমিতাভ পাল মনে করেন  'বালুচরীর প্রাণই হল গল্প' তিনি চেয়েছিলেন রামায়ণের প্রতিটি মুহূর্ত যেন এই শাড়ির বুননে জীবন্ত হয়ে ওঠে। পরতে পরতে যেন একটি আখ্যান গড়ে ওঠে।
তবে পুজোর বাজারে এই শাড়ি এক বিশেষ দিক নির্দেশ করছে। এবার ক্রেতারা কেবল সাজগোজের পোশাক চাইছেন না, বরং খুঁজছেন গল্পসমৃদ্ধ শিল্পকর্ম। শহরের বুটিক থেকে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম—সবখানেই থিমভিত্তিক হ্যান্ডলুমের চাহিদা বাড়ছে। ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের মতে, পুজোর ফ্যাশনে এবারের বড় প্রবণতা হল ‘ন্যারেটিভ টেক্সটাইল’। অর্থাৎ পোশাককে ক্যানভাস করে গল্প বলা। ঐতিহ্যবাহী বালুচরীর বুননে রামায়ণের পূর্ণ কাহিনি এই প্রবণতারই সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হাতে বোনা ঐতিহ্যবাহী শাড়ির প্রতি ঝোঁক উৎসাহিত করেছে বালুচরি শিল্পকে। ব্যবসায়ীদের কথায়, বিলাসপণ্যের বাজারে মন্দা নেই। বরং যারা কিনছেন, তাঁরা শাড়ির পেছনের গল্প, নকশার আখ্যান ও শিল্পীর নাম জেনে তবেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বালুচরী শাড়ির উৎপত্তি মুর্শিদাবাদের বালুচর গ্রামে হলেও ১৯ শতকের শেষদিকে সেই শিল্প প্রায় হারিয়ে যায়। পরে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে তাঁতিরা এই বয়নশিল্পকে নতুন করে প্রাণ দেন। এখানে রেশমের উপর সূক্ষ্ম বুননে দেবদেবীর কাহিনি, রামায়ণ-মহাভারতের দৃশ্য ও লোকজ আখ্যান ফুটিয়ে তোলা হয়। ধীরে ধীরে বিষ্ণুপুরই বালুচরীর প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে এবং আজ বালুচরী মানেই বিষ্ণুপুরের সুনাম বিশ্বজোড়া।
কয়েক বছর ধরে সাবেকিয়ানা থেকে বেরিয়ে বালুচরিতে বৈচিত্র আনার চেষ্টা করছেন নবীন প্রজন্মের শিল্পীরা। শাড়িতে উঠে এসেছে মন্দিরের গায়ের টেরাকোটাও। বুনেছেন মুগা, কটকি, এরি, নকসিকাঁথার ডিজাইন। অতীতে বিভিন্ন থিমের উপর বালুচরি, কারুকলা, অরুণিমা, অষ্টমী, তিনলাখি বালুচরিও নজর টেনেছে ভালো। এবার নজর টানবে তুলনায় কমদামী দেড়লাখি এই বালুচরি শাড়ি।

You might also like!