দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :আজকাল ইনস্টাগ্রাম রিল ছাড়া মোবাইল ব্যবহার কল্পনাই করা যায় না। সবাই রিল বানাচ্ছে, আবার অন্যের রিল দেখছেও মজা পাচ্ছে। কিন্তু রিল আসার আগে একসময় রাজত্ব করত একটি চীনা অ্যাপ—টিকটক। করোনা লকডাউনের আগ পর্যন্ত টিকটক ভারতে ভীষণ জনপ্রিয় ছিল। লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী প্রতিদিন অসংখ্য ভিডিও বানাতেন এই প্ল্যাটফর্মে। তবে মহামারির পর নিরাপত্তা-জনিত কারণে ভারতে টিকটক বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় পাঁচ বছর ধরে দেশে নিষিদ্ধ এই অ্যাপ।
কিন্তু সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি উঠেছে—ভারতে টিকটকের উপর থেকে নাকি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে! বলা হচ্ছে অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট দু’টোই আনব্লক করা হয়েছে, আবার ভিডিও বানানো সম্ভব হবে। তবে আসল প্রশ্ন হল—এই খবর কি সত্যি, নাকি কেবল গুজব? চলুন জেনে নেওয়া যাক এর বাস্তবতা।
ভারতে পাঁচ বছর পর চীনা শর্ট-ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটকের ওয়েবসাইট আনব্লক হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে। একাধিক পোস্টে ব্যবহারকারীরা দাবি করছেন, টিকটকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট নাকি আবারও চালু হয়ে গিয়েছে দেশে। ফলে অ্যাপটির ফিরে আসা নিয়ে জল্পনা আরও উসকে উঠেছে। অনেকেই ধরে নিচ্ছেন, ইনস্টাগ্রাম রিলের মতো এবার আবার টিকটকেও ভিডিও বানানোর সুযোগ মিলতে চলেছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে আলোচনা। তবে জল্পনা-গুঞ্জনের মাঝেই সরকার এই বিষয়ে নিজেদের আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে।
চীনা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টিকটক নিয়ে সম্প্রতি যে খবর ছড়িয়েছে, তার বিষয়ে স্পষ্টীকরণ দিয়েছে ভারত সরকার। সরকার জানিয়েছে, টিকটকের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো নির্দেশ জারি করা হয়নি। সরকারি সূত্রের দাবি—“ভারত সরকার টিকটকের ব্যান তোলার সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ ধরনের খবর সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর।”
আসলে, কিছু ব্যবহারকারী দাবি করেছিলেন যে তাঁরা টিকটকের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারছেন। এর পর থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে একে অপরবিরোধী তথ্য সামনে আসতে শুরু করে। তবে স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখা জরুরি, টিকটকের মোবাইল অ্যাপ এখনো গুগল প্লে স্টোর কিংবা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর—কোনো জায়গাতেই পাওয়া যাচ্ছে না।
করোনা সময়ে টিকটক ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় অ্যাপ ছিল। কিন্তু চীনের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার জেরে এর ভাগ্য বদলে যায়। ২০২০ সালের জুনে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চীন সেনা সংঘর্ষের পরই ভারত সরকার জাতীয় নিরাপত্তা ও তথ্য গোপনীয়তার কারণ দেখিয়ে টিকটক-সহ মোট ৫৯টি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে। সেই সময়ে ভারত ছিল টিকটকের সবচেয়ে বড় বিদেশি বাজার, যেখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ ছোট ভিডিও বানাতেন। অনেকেই মনে করেন, গালওয়ান উপত্যকার সংঘাত না ঘটলে হয়তো টিকটক এখনও দেশে চালু থাকত।
এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে—হঠাৎ করে কেন এমন গুজব ছড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়? এর মূল কারণ ভারত-চীন সম্পর্কের সাম্প্রতিক উষ্ণতা। আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক-সংক্রান্ত টানাপড়েনের মাঝেই ভারত ও চীনের সম্পর্ক আবারও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে। চীনের মনোভাবেও পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও চীন সফরের পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই অনেকের ধারণা—যখন দুই দেশের সম্পর্ক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে, তখন টিকটকের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারও সম্ভব হতে পারে।
কিছু ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, টিকটকের ওয়েবসাইটে নাকি শুধু হোমপেজ খোলা যাচ্ছে, কিন্তু এর বাইরে কিছুই করা যাচ্ছে না। তবে এ নিয়ে সরকার ইতিমধ্যেই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে।