দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: হাঁচি যদিও একেবারেই স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় ঘটনা, তবুও ভারতীয় সংস্কৃতি ও শাস্ত্রে এর বিশেষ তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া যায়। বিশেষ করে ধর্মীয় আচার, পূজার সময় বা কোনো শুভ কাজে বেরোনোর আগে হাঁচি দেওয়া নিয়ে প্রচলিত রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাস। অনেকে একে অশুভ সংকেত মনে করেন, আবার শাস্ত্র অনুযায়ী হাঁচির মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে শুভ লক্ষণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক, পূজার সময় হাঁচি সম্পর্কে হিন্দুশাস্ত্র কী ব্যাখ্যা দিয়েছে।ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, কোনও পূজা বা শুভ কাজ শুরু করার সময় হাঁচি দেওয়া অশুভ সংকেত হিসেবে ধরা হয়। মনে করা হয় এতে পূজায় বাধা সৃষ্টি হতে পারে। তাই শাস্ত্রে বলা হয়েছে, এমন সময়ে হাঁচি এলে কিছুক্ষণ বিরতি নিতে হবে, মুখ ধুতে হবে বা জল খেতে হবে। এরপর পুনরায় পূজা শুরু করা উচিত।
তবে, পূজা চলাকালীন হাঁচি দিলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শাস্ত্রে বলা হয়েছে, এটি শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এমন সময়ে ভক্ত যদি একাগ্রতা হারান, তবে একটু বিরতি নিয়ে আবার মনোযোগ দিয়ে পূজা চালিয়ে যেতে হবে। শাস্ত্র অনুসারে, হাঁচির শব্দ কোন দিক থেকে আসছে তার ওপরও নির্ভর করে এর শুভ–অশুভ ফল। উত্তর বা পশ্চিম দিক থেকে হাঁচি শোনা গেলে এটি শুভ সংকেত। বিশ্বাস করা হয়, এতে নতুন সুযোগ ও সৌভাগ্যের সম্ভাবনা তৈরি হয়। উত্তর-পূর্ব দিক থেকে হাঁচি শোনা গেলে তা ঘরে সম্পদ এবং সমৃদ্ধি আসার ইঙ্গিত বলে মনে করা হয়। কোনও কবরস্থান বা বিষণ্ণ পরিবেশে হাঁচি হলে শাস্ত্রে একে শুভ লক্ষণ হিসেবেই ধরা হয়েছে।
যদিও শাস্ত্রে হাঁচির শুভ–অশুভ অর্থ বর্ণিত হয়েছে, বাস্তবে হাঁচি সম্পূর্ণ শারীরবৃত্তীয় একটি বিষয়। ধুলো, ঠান্ডা, অ্যালার্জি বা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণেই মানুষ হাঁচে। তাই এর সঙ্গে সরাসরি ভাগ্য বা অশুভ প্রভাব যুক্ত না-ও থাকতে পারে। আর, সেই কারণেই পূজার শুরুতে হাঁচি এলে সামান্য বিরতি নিন। মুখ ধুয়ে, হাত ধুয়ে আবার পূজা শুরু করুন। মনকে শান্ত করে ভক্তিভরে মন্ত্রোচ্চারণ চালিয়ে যান। অযথা ভয় বা কুসংস্কার এড়িয়ে চলা উচিত।
সব মিলিয়ে পূজার সময় হাঁচি শুভ না অশুভ— এ নিয়ে দ্বিমত থাকলেও শাস্ত্রে কিছু নির্দেশিকা রয়েছে। তবে মনে রাখা দরকার, হাঁচি মূলত একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। ধর্মীয় আচার পালনের সময় মনোযোগ এবং ভক্তিই আসল। আর, সেই কারণেই হাঁচিকে অতিরিক্ত কুসংস্কারের চোখে দেখা উচিত নয়।