দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে মেট্রোয় ফের বিভ্রাটের মুখে পড়তে হল যাত্রীদের। সোমবার বেলা নাগাদ গিরিশ পার্ক থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে, যার জেরে বিপাকে পড়েন বহু যাত্রী।
গত শনি এবং রবিবার মেট্রো পরিষেবা ঠিকই ছিল। স্বাভাবিক নিয়মেই চলেছে মেট্রো। সে কথা জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানিয়েছিলেন, শনিবার হওয়া সত্ত্বেও উত্তর-দক্ষিণ (ব্লু লাইন) মেট্রোয় চলাফেরা করেছেন অন্তত ৫ লক্ষ ২৫ হাজার। ৯৮ শতাংশ ট্রেন সঠিক সময়েই চলেছে। রবিবার এই বিবৃতির পরেই সপ্তাহের প্রথম দিন অর্থাৎ, সোমবার ফের বিগড়োল মেট্রো। কর্তৃপক্ষের দাবি, দমদম-নোয়াপাড়ার মাঝখানে কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি হয়েছিল। সে সমস্যা এখন মিটে গিয়েছে। ট্রেন চলাচল আবার স্বাভাবিক। বড়জোড় মিনিট দশেক পরিষেবা ব্যাহত ছিল বলে দাবি মেট্রো কর্তৃপক্ষের।
মেট্রোয় যখন এই গোলযোগ দেখা দিয়েছে, সেই সময় দক্ষিণ থেকে উত্তরের দিকেই আসছিলেন গড়িয়ার বাসিন্দা স্নেহাশিস সেন। তিনি জানান, শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে দুপুর ১২টা ১ মিনিটে ট্রেন ছেড়েছিল। সেই ট্রেন টালিগঞ্জে পৌঁছোয় ১২টা ১৩ মিনিটে। সেখানেও ৮ মিনিট দাঁড়িয়েছিল ট্রেন। সেই সময় টালিগঞ্জ স্টেশনেই মেট্রো কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেন, গোলযোগ দেখা দেওয়ার কারণে ট্রেন গিরিশ পার্ক পর্যন্ত যাবে। শেষমেশ টালিগঞ্জ থেকে ট্রেনটি ছাড়ে দুপুর ১২টা ২১ মিনিটে। সেটি চাঁদনি পৌঁছোয় ১২টা ৪৩ মিনিটে। সব মিলিয়ে ১৩ মিনিট দেরিতে চলেছে ট্রেনটি।
গত সপ্তাহেও একই ঘটনাই ঘটেছিল। শুক্র, শনি এবং রবি— তিনটি ছুটির দিনে ‘ভাল সার্ভিস’ দিয়েছিল মেট্রো। সে কথাও কর্তৃপক্ষ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সোমবার গোলযোগ দেখা দেয় মেট্রোয়। কবি নজরুল স্টেশনে একটি রেক খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণে দক্ষিণেশ্বর থেকে শহিদ ক্ষুদিরামের দিকে যাওয়ার পথে মহানায়ক উত্তমকুমার বা টালিগঞ্জ স্টেশনের পর থেকে আর মেট্রো চলছিল না। টালিগঞ্জ স্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল যাত্রীদের। যার জেরে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ব্যাহত ছিল মেট্রো পরিষেবা। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল এই সোমবারেও।
কলকাতায় তিন মেট্রোপথের সংযুক্তির খবর যাত্রীদের মধ্যে যতটা উচ্ছ্বাসের জন্ম দিয়েছিল, পরিষেবা সংক্রান্ত ভোগান্তিতে সেই উৎসাহ ইতিমধ্যেই ফিকে হতে শুরু করেছে। ইস্ট-ওয়েস্ট (গ্রিন লাইন) এবং নোয়াপাড়া-বিমানবন্দর (ইয়েলো লাইন) মেট্রোর পরিষেবা নিয়ে যাত্রীদের ততটা অভিযোগ না থাকলেও সাবেক উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো নিয়ে ক্ষোভের পারদ চড়ছে।
চার দশকের পুরনো মেট্রো হাজার বাধা-বিপত্তি পার করলেও এতটা ছন্নছাড়া আগে কখনও দেখায়নি বলে অভিযোগ যাত্রীদের। নতুন পরিষেবা খুলে দেওয়ার সময়ে দেশের সবচেয়ে পুরনো মেট্রোপথের এত দুর্দশা হবে কেন, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
পুজো আসন্ন। ফলে নানা প্রয়োজনে মেট্রোয় সফরের তাগিদ বাড়ছে। এই অবস্থায় যাত্রী পরিষেবায় ভোগান্তি মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছেও যথেষ্ট অস্বস্তির। মেট্রোর একটি সূত্রের বক্তব্য, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। যে সব কারণে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেখানে ধরে ধরে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে কত দিনে মেট্রোর পরিষেবা স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানাতে পারেননি।