কলকাতা, ১৯ মে: ''বিনাশকালে বুদ্ধিভ্রম'' হয়। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দল ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে, তাই সন্ন্যাসীদের নিশানা করা হচ্ছে। শনিবার নির্বাচনী জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধুদের কটাক্ষ করার জন্য রবিবার এভাবেই কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসী কার্তিক মহারাজ।
এক সাক্ষাৎকারে স্বামী প্রদীপ্তানন্দ মহারাজ তথা কার্তিক মহারাজ বলেন, গত বছর গঙ্গাসাগরে সারা দেশ থেকে আসা সাধু সন্ন্যাসীদের যেভাবে নৃশংসভাবে মারধর করা হয়েছিল তা গোটা দেশ দেখেছে। আর এখন ভিত্তিহীনভাবে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে ধর্মকর্মে নিযুক্ত সন্ন্যাসীদের সরাসরি নিশানা করছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে তৃণমূলের ধ্বংসের সময় এসে গেছে।কার্তিক মহারাজ এও বলেন, নির্বাচনের দিন আমি বুথে গিয়েছিলাম এবং আমার ভোট দিয়ে আশ্রমে ফিরে আসি। তবে আমি টিএমসি বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছি। কারণ, তিনি সাম্প্রদায়িক কথা বলেন। তিনি ভাগীরথীতে হিন্দুদের ডোবানোর কথা বলেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী মোদীকেও কটাক্ষ করেন তৃণমূলের এই বিধায়ক।
প্রসঙ্গত, গত বছর ডিসেম্বরে কলকাতায় যে "এক লাখ কণ্ঠে গীতা পাঠ" (এক লাখ লোকের দ্বারা গীতা পাঠ) হয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন স্বামী প্রদীপ্তানন্দ মহারাজ ওরফে কার্তিক মহারাজ।উল্লেখ্য, শনিবার আরামবাগের নির্বাচনী সভা থেকে বড় অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।বলেন, ভারত সেবাশ্রম, রামকৃষ্ণ মিশনের কিছু মহারাজ সরাসরি রাজনীতি করে দেশের সর্বনাশ করছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "সব সজ্জন সমান হয় না। সব সাধুও নয়। আমাদের মধ্যেই কি সবাই সমান আছেন? আমি চিহ্ণিত করেছি বলেই বলছি।"এর পরই মমতা বলেন, "ভারত সেবাশ্রমকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। আমার শ্রদ্ধার তালিকায় ওরা দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। বহরমপুরের একজন মহারাজ আছেন। কার্তিক মহারাজ। তিনি ওখানে বলছেন- তৃণমূলের এজেন্টকে বসতে দেব না। সেই লোকটাকে আমি সাধু বলে মনে করি না, কারণ তিনি সরাসরি রাজনীতি করে দেশটার সর্বনাশ করে দিচ্ছেন। আমি চিহ্ণিত করেছি, কে কে করেছেন।" বাম জমানার প্রসঙ্গ টেনে মমতা মনে করিয়েছেন, "আসানসোলে একটা রামকৃষ্ণ মিশন আছে। ওদের আমি কী সাহায্য করিনি? সিপিএম যখন খাবার বন্ধ করে দিয়েছিল, তখন আমি পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিলাম। আপনাদের অস্তিত্ব নিয়ে, স্বাধীকার নিয়ে আমি কিন্তু পুরো সমর্থন দিয়েছিলাম। মা, বোনেরা আসত, তরকারি কেটে দিত। সিপিএম কিন্তু আপনাদের কাজ করতে দিত না। নদিয়াতে ইস্কনকেও ৭০০ একর জমি দিয়েছি।" মমতার কথায়, "আমিও জানি একটা, দুটো থাকবে। দিল্লি থেকে ওদের কাছে নির্দেশ আসে, বলে একে ভোট দিতে বলো। কিন্তু সাধু, সন্তরা কেন একাজ করবেন? ওদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। ওদের যারা দীক্ষা নেন, তাঁরা ওই হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে রয়েছেন। কিন্তু রামকৃষ্ণ মিশন তো ভোট দেয় না। তাহলে অন্যকে কেন ভোট দিতে বলবে?" মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, "কেউ কেউ হিংসা করছে, সবাই নয়। কিন্তু মনে রাখবেন, স্বামী বিবেকানন্দের বাড়িটাই থাকত না, যদি এই মেয়েটা না বেঁচে থাকত।" মুখ্যমন্ত্রী জানান, স্বামীজির বাড়ি দখল করার চেষ্টা হয়েছিল। জানতে পেরেই পরের দিন মেয়রকে পাঠিয়ে বললাম- যা টাকা লাগে রাজ্য দেবে,, ওই বাড়ি স্বামীজির থাকবে। অন্য কারও নয়। সিস্টার নিবেদিতার বাড়িও দখল হয়ে যাচ্ছিল। আমরাই সেটা রক্ষা করেছি। অনেকে ভুলে গেছে, তাই বলছি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে রামকৃষ্ণ মিশনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তারা সরাসরি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সন্ন্যাসী বলেন, মিশন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকে, তাই মিশনের সাধু সন্ন্যাসীরা ভোট দেয় না। ইসকনের তরফেও এবিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউ। তাঁদের তরফে বলা হয়, আমাদের রাজনীতি করা উচিত নয়।