দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের অন্দরে ফের দলাদলির ছাপ স্পষ্ট। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বে এসআইআর ও বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যুতে এক কর্মসূচি ঘোষিত হয়েছিল। অথচ একই ইস্যুতে আলাদা করে কলকাতায় সভা করলেন প্রাক্তন সভাপতি ও বর্তমান এআইসিসি ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী। তাতে প্রদেশ কংগ্রেস ও অধীর শিবিরের বিরোধ প্রকাশ্যে চলে এলো। যা ঘিরে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল কংগ্রেসও। অভিযোগ উঠেছে, অধীর চৌধুরীর এই কর্মসূচি সম্পর্কে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে কোনও রকমভাবে অবহিত করা হয়নি। এমনকি কোনও আমন্ত্রণও পাঠানো হয়নি। কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন অধীর ঘনিষ্ঠ এক যুব নেত্রী, যিনি কিছুদিন আগেই গঠিত রাজ্য যুব কংগ্রেস কমিটির অন্যতম সদস্য। অভিযোগ আরও গুরুতর, এই সভা আয়োজনের বিষয়টি সেই কমিটির মধ্যেও কোনও আলোচনা ছাড়াই চূড়ান্ত করা হয়। বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতেও লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
রাহুল গান্ধীর দেওয়া কর্মসূচির বাইরে গিয়ে এভাবে আলাদা রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়ায় দলীয় শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে অধীরের বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে, রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ঘটনা প্রদেশ কংগ্রেসের নেতৃত্বের ওপর অধীরের আস্থাহীনতার প্রতিচ্ছবি। এই প্রসঙ্গে দলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের খোঁচা, “একটা দলে নেতৃত্বই দু’ভাগ। প্রদেশ সভাপতি একটা কর্মসূচি করলে, তার পালটা নামতে হয় প্রাক্তন সভাপতিকে। দলের নেতা-কর্মীরা অখুশি।” তৃণমূল কংগ্রেস এই পরিস্থিতিতে যথারীতি খোঁচা দিতে ছাড়েনি। সদ্য ইন্ডিয়া জোটের মঞ্চে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে রাজ্যে সম্ভাব্য সমঝোতা নিয়েও জল্পনা ছড়ায়। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার স্পষ্ট করেছেন, “ছাব্বিশের ভোটে ২৯৪ আসনেই একলা লড়াইয়ের প্রস্তুতি চলছে। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এআইসিসির নির্দেশ মেনেই সিদ্ধান্ত হবে।” তবে এদিন কলকাতায় সভা করে পরিযায়ী আর বাংলা-বাঙালি ইসুতে একেবারে তীব্র ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন অধীর। তাঁর অভিযোগ, “এ সবই ভোটে জেতার খেলা। রাজ্য সরকারের কাছে রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকের হিসাবও নেই। বাংলা-বাঙালি করে যাচ্ছেন!”
অন্যদিকে, অধীর চৌধুরী রাহুল-অভিষেকের কাছাকাছি আসা নিয়ে নতুন সমীকরণের প্রশ্নে বলেছেন, “এসব কংগ্রেসের লেজুড় হয়ে জাতীয় মঞ্চে পরিচিতি পাওয়ার চেষ্টা।” সঙ্গে শুভঙ্করের ২৯৪ আসনে প্রার্থী দেওয়ার দাবিকে হেসে উড়িয়ে বলেছেন, “আমি প্রদেশ সভাপতি নই, এসব বলতে পারব না।” রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, অধীর চৌধুরী বরাবরই মমতা বিরোধী এবং সিপিএম ঘনিষ্ঠ মনোভাবাপন্ন। তিনি রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রবল সমর্থক। বলা বাহুল্য, এদিনের কর্মসূচিতে সেই অবস্থানকেই আরও স্পষ্ট করলেন প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব অধীর চৌধুরী।