দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :দিনভর সক্রিয় থাকতে হলে অপরিহার্য হল পর্যাপ্ত ঘুম। সাধারণভাবে আট ঘণ্টা ঘুমের কথা বলা হলেও কারও ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় একটু বেশি, আবার কারও লাগে কিছুটা কম। যেমন শরীর চালাতে খাবার ও জল দরকার, তেমনই দরকার গভীর ঘুম। টানা কয়েক রাত জেগে থাকলেই হয়তো শরীর সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়বে না, তবে মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে। ফলে কাজের সময় মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়, ভুলভ্রান্তি বেড়ে যায়, এমনকি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও জটিলতা দেখা দেয়।
আজকের ব্যস্ত জীবনে নানা কাজের চাপে অনেকেরই ঘুম কমে যায়। বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেশি। কারণ, কর্মক্ষেত্রের দায়িত্বের পাশাপাশি গৃহস্থালির সিংহভাগ কাজও সামলাতে হয় তাঁদের। এত কিছু একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে প্রায়ই ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। চিকিৎসকরা বলছেন, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য বেশি ঘুম প্রয়োজন। তাই মহিলাদের জন্য ৭-৮ ঘণ্টার ঘুম যথেষ্ট নয়।
‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’ বলছে, প্রায় ৪০ শতাংশ নারী অনিদ্রায় ভুগে থাকেন। প্রাথমিক কয়েকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে জৈবিক গঠন অনুসারে পুরুষ এবং মহিলাদের ঘুমের প্রয়োজনীয়তার মধ্যে সামান্য পরিবর্তন থাকতে পারে। এ ছাড়া গবেষণায় বলা হচ্ছে যে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ঘুম অনেক বেশি সজাগ। অর্থাৎ, ছেলেদের মধ্যে গভীর ঘুমের প্রবণতা আছে, তুলনায় মেয়েদের ঘুম পাতলা। ফলে সময় পেলেও বিভিন্ন কারণে ঘুম ভেঙে যায়। অনেক মহিলাই যে হেতু ঘর এবং বাইরে দুটোই সামলান, তার জন্য একটা মানসিক চাপ সব সময়ে কাজ করে তাঁদের মধ্যে। নিশ্চিন্তে ঘুমোনোর সুযোগ কম থাকে। এ ছাড়াও হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করতে, মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে, ব্যক্তিগত জীবনযাপন ও কর্মক্ষমতা বজায় রাখতেও মহিলাদের ঘুমের প্রয়োজন বেশি।
অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে কী করতে পারেন মহিলারা?
১) টিভি, ল্যাপটপ কিংবা ফোন ব্যবহার করার সময় কমিয়ে আনুন। বৈদ্যুতিন পর্দায় চোখ রাখলেই মস্তিস্ক সজাগ ও সক্রিয় হয়ে ওঠে। শুতে যাওয়ার অন্তত ঘণ্টাখানেক আগে এই নিজেকে এই ধরনের পর্দার সামনে থেকে সরিয়ে নিন। যদি কিছু করতেই হয়, তবে একটু দূর থেকে মৃদু সঙ্গীত বাজাতে পারেন। তবে হেডফোন কানে লাগিয়ে ঘুমাবেন না কোনও মতেই।
২) কী খাচ্ছেন তাঁর সঙ্গেও ঘুমের যোগ রয়েছে। ক্যাফিন-সমৃদ্ধ খাবার খেলে বেশ কয়েক ঘণ্টা ঘুম আসে না। কফি ও চকোলেটে এই উপাদানটি থাকে। তাই ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৬ ঘণ্টা আগেই থামিয়ে দিতে হবে এই ধরনের খাবার। পাশাপাশি রাতের খাবার যথাসম্ভব হালকা রাখাই ভাল অতিরিক্ত তেল মশলাযুক্ত খাবার খেলে হজমের সমস্যায় ঘুম আসতে বিলম্ব হতে পারে।
৩) ঘুমোতে যাওয়ার সময় অনেকেরই মাথায় হরেক রকমের দুশ্চিন্তা আসে। আর এই দুশ্চিন্তাই অনিদ্রার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই সমস্যাগুলি মাথার থেকে বার করে দেওয়ার চেষ্টা করুন। এর সবচেয়ে ভাল উপায় রোজ ঘুমানোর আগে দুশ্চিন্তার কথা লিখে রাখা। শুধু দুশ্চিন্তার কথা নয়, আগামী দিনে কী কী কাজ বাকি পড়ে আছে, তা-ও লিখে রাখতে পারেন। এতে অন্তত কিছু সময়ের জন্য মাথা হালকা হয়ে যেতে পারে।