দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) নামে ‘ভোটচুরি’র অভিযোগ ঘিরে সোমবার উত্তাল হয়ে উঠল দেশের রাজধানী। দিল্লির বুকে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের প্রায় ২০০ সাংসদ সরাসরি নির্বাচন কমিশনের দপ্তর ঘেরাও করতে রওনা দেন সংসদ ভবন থেকে। হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে স্লোগান— “গলি গলি মে শোর হ্যায়, নরেন্দ্র মোদি চোর হ্যায়”— এমন হুঁশিয়ারি দিয়েই এগোচ্ছিল মিছিল। কিন্তু সংসদ ভবন থেকে কিছুদূর যেতেই পুলিশি ব্যারিকেডে আটকে যায় পদযাত্রা।
সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ শুরু হওয়া এই মিছিলের লক্ষ্য ছিল সরাসরি নির্বাচন কমিশনের অফিসে পৌঁছনো। যদিও আগেভাগেই দিল্লি পুলিশের তরফে অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ বিরোধী শিবিরের। পাশাপাশি কমিশনের পক্ষ থেকে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়— আলোচনার জন্য তারা প্রস্তুত, তবে শর্তসাপেক্ষে। দুপুর ১২টার মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০ জন প্রতিনিধির নাম পাঠাতে বলা হয়। কিন্তু বিরোধী জোটের নেতা-সাংসদরা সেই শর্ত মানেননি, বরং একযোগে পদযাত্রা শুরু করেন।
সংসদ ভবন থেকে মিছিল বেরিয়ে কিছুটা এগোতেই প্রথম ব্যারিকেডে আটকে যান তাঁরা। সেখানেই তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, সুস্মিতা দেব শাড়ি পরেই ব্যারিকেডে চড়ে স্লোগান দিতে থাকেন। সপা নেতা অখিলেশ যাদব ও ভূপেন্দ্র যাদব ব্যারিকেড টপকে এগিয়ে আসেন, যা ঠেকাতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। অন্যদিকে, বাধা পেয়ে রাস্তায় বসে বিক্ষোভে শামিল হন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে যখন তখন ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা শুরু হয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে উত্তাল পরিস্থিতির পরে দিল্লি পুলিশ আটক করে রাহুল গান্ধী-সহ একাধিক বিরোধী সাংসদকে। এসময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মহুয়া মৈত্র, সহকর্মীরা তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যান নিরাপদ স্থানে।
বিরোধীদের অভিযোগ, এই এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিহারে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যা আসন্ন লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে বিজেপির পক্ষে সুবিধা করে দিতে একপ্রকার পরিকল্পিত কারচুপি। গত বৃহস্পতিবারই রাহুল গান্ধী সরাসরি অভিযোগ করেছিলেন, “বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচন কমিশন ভোটের খাতায় কারচুপি করছে।” কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা— একাধিক রাজ্যের উদাহরণও তুলে ধরেন তিনি। এদিকে আগামী বছরে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, অসম, তামিলনাড়ুতে বিধানসভা ভোট রয়েছে। ফলে শঙ্কিত বিরোধী শিবির। গত ২১ জুলাই ধর্মতলায় দলীয় সভা থেকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, এসআইআর নিয়ে প্রয়োজনে কমিশনের দপ্তর ঘেরাও করা হবে। এবার রাজধানীর বুকে সেই কর্মসূচি ঘিরে রীতিমতো উত্তাল হয়ে উঠল নয়াদিল্লি।