দুর্গাপুর: 'দেখ কেমন লাগে, আগে নিজের পার্টি সামলাক। তারপর আমাকে।' রবিবার বিকালে বুদবুদে দলীয় কর্মী সভা যোগ দিয়ে কীর্তি আজাদের 'কলিযুগের মহিষাসুর' আখ্যার পাল্টা জবাব দিলেন বিজেপি সাংসদ তথা বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ।
প্রসঙ্গত, বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ প্রচারে নামতেই তপ্ত রাজনৈতিক ময়দান। তৃণমূল প্রার্থী তথা বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটারের এক এক বলে ছক্কা হাঁকতে শুরু করেছেন দিলীপ ঘোষ। রবিবারই দুর্গাপুরে প্রচারে বেরিয়ে তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ দিলীপ ঘোষকে কলিযুগের মহিষাসুর বলে আক্রমন করেন। যদিও তার ১২ ঘন্টার মধ্যে দলীয় কর্মীদের হাতাহাতিতে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েন কীর্তি আজাদ। বেগতিক বুঝে মন্দিরে আশ্রয় নিয়ে হাফ ছাঁড়লেন তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ। ঘটনাস্থল দুর্গাপুর নগর নিগমের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আমরাই গ্রাম।
২০১১ সালে রাজ্যে সরকার বদলের পর দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা তৃণমূল ঠিকা শ্রমিক সংগঠনের রাশ বদল হয়। তৃণমূলের শ্রমিক নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা শেখ শাহাবুদ্দিন সহ অন্যান্যরা এই ঠিকা শ্রমিক সংগঠন দেখভালের দায়িত্ব পায়। তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় ১২ নম্বর ওয়ার্ডে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। একদিকে শেখ শাহাবুদ্দিন অন্যদিকে আমিনুর রহমান। ওই দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে মাঝেমধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ১২ নম্বর ওয়ার্ড আমরাই গ্রাম, কুড়রিয়া এলাকা। এমনকি তাদের লড়াইয়ে কখনও বোমাবাজি আবার কখনও গুলির লড়াই হয়। আর তার আতঙ্কে সিটিয়ে থাকে সাধারন মানুষ।
কিছুদিন আগে আইএনটিটিইউসি রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, আইএনটিটি ইউসির জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটকের হাত ধরে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ঠিকা শ্রমিক সংগঠনের কমিটিতে বদল আসে। শেখ শাহাবুদ্দিন এবং তার সঙ্গীদের বদলে কমিটিতে রাখা হয় আমিনুর রহমান ও তার সঙ্গীদের। আর তাতেই যেন যজ্ঞে ঘি পড়ে। রবিবার বর্ধমান- দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কীর্তি আজাদ ১২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার ছিল। মিছিলের নেতৃত্বে কে থাকবেন। তাই নিয়ে ওই দুই গোষ্ঠীর বাদানুবাদ শুরু হয়।শহীদ বেদীতে মাল্যদান করার পর কীর্তি আজাদকে সঙ্গে নিয়ে শাহাবুদ্দিন ও তার দলবল আমরাই গ্রামের রাস্তায় মিছিল শুরু করেন। কিছুটা যাওয়ার পরই মিছিলের নেতৃত্বের দখল নিতে যায় অপর গোষ্ঠী। আর তাতেই মুহুর্তেই শুরু হয়ে যায় দুই পক্ষের হাতাহাতি। তাতেই বেকায়দায় পড়েন প্রার্থী কীর্তি আজাদ সহ দলের অন্যান্য নেতৃত্বরা। দুই গোষ্ঠীর হাতাহাতির জেরে কার্যত অসুস্থ হয়ে পড়েন কীর্তি আজাদ। বেগতিক বুঝে সামনেই থাকা একটি মন্দিরে গিয়ে ঢুকে বসে পড়েন। তখন মন্দিরে পুজো শুরু হয়েছে। বাজছে কাঁসর, ঘন্টা, ঢাক। মন্দিরে বসে করজোড়ে পুজোর আরাধনার তাল মেলাতে থাকেন। এদিকে পরিস্থিতি সামল দিতে মন্দিরের গেটও বন্ধ করা হয়। প্রার্থীর মিছিলে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্য আসতে চরম অস্বস্তিতে পড়নে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। এবং রাজনৈতিক মহলে বিস্তর শোরগোল পড়ে যায়। যদিও বিরোধীর এটাকে তৃণমূলের সংস্কৃতি বলে সমালোচনা করেছে। তবে কীর্তির সামনে দলের কর্মীদের হাতাহাতি প্রকাশ্যে আসতেই
বিজেপি সাংসদ তথা বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ যেন ফুলটস বল পেয়ে গেলেন। আর তাতে এদিনও ওভারবাউন্ডারি হাঁকলেন তিনি। এদিন নিজের স্বভাবসিদ্ধ বাক্যে পাল্টা কটাক্ষ করে কীর্তির বাক্যবানের জবাব দেন। রবিবার বিকালে বুদবুদের গলসী-বিধানসভার দলীয় কর্মীদের নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দেন দিলীপ ঘোষ। সেখান থেকে বেরিয়ে কীর্তি আজাদের কটাক্ষের জবাবে দিলীপ ঘোষ বলেন," দ্যাখ কেমন লাগে। আগে নিজের পার্টি সামলাক, তারপর আমাকে।" এদিন কীর্তির সামনেই তৃণমূলকর্মীদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কীর্তিকে টেনে দিলীপ ঘোষ বলেন," কেমন দৌঁড় করিয়েছে। এইতো সবে শুরু। এখন দেড়'মাস বাকি আছে।"