দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: টিএমসিপি-র প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভা যেন এক লহমায় রূপ নিল রাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্রে। সভামঞ্চ থেকেই আর জি কর কাণ্ড ঘিরে কেন্দ্র ও সিবিআইকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ ২৪ ঘণ্টায় যেটা করেছে, মোদির সিবিআই সেটা গোটা বছরে করে দেখাতে পারেনি।”
বৃহস্পতিবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তিতে মাল্যদান করেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মাননীয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর মঞ্চে উঠেই আর জি কর ইস্যুতে সরব হন অভিষেক। বলেন, “গতবার এই সময় আর জি কর নিয়ে রাজ্য উত্তাল ছিল। সেইসময় বলেছিলাম, যারা রাত দখলের লড়াই করেছেন সেই নারীদের সম্মান জানাই। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ ১ দিনে যা করেছে, নরেন্দ্র মোদির সিবিআই একবছরেও তা করতে পারেনি।” অপরাজিতা বিল বিধানসভায় পাশ হওয়ার পরও কেন এখনও আইনে পরিণত হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তিনি। এরপরই বিরোধীদের একহাত নেন অভিষেক। বলেন, “যারা রাত দখল করেছিল তাদের উদ্দেশ্য শুধু এই ঘটনার প্রতিবাদ করা নয়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেওয়া। না হলে সেই সিপিএম কোথায়? এই বিল আটকে রাখল যারা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নেই কেন? রাস্তায় নামেনি কেন?” এরপরই দোষীদের শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠলেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় এক তরুণী ইন্টার্ন চিকিৎসক-কে ধর্ষণ ও খুন করা হয়। এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোক ও ক্ষোভে ফেটে পড়ে রাজ্য। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্য পুলিশ সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে গোটা মামলা সিবিআই-এর হাতে গেলে শুরু হয় নিরপেক্ষ তদন্ত। অভিযুক্ত সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে জোরাল প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। কিন্তু ঘটনার এত সময় পরেও আর কোনও অভিযুক্ত গ্রেপ্তার না হওয়ায় উঠতে শুরু করে নানা প্রশ্ন। বাম ও অতিবাম ছাত্র সংগঠনগুলি আগেই অভিযোগ তোলে যে, সরকার রাজ্য পুলিশকে দিয়ে কেবলমাত্র একজনকে 'বলির পাঁঠা' বানিয়েছে, আসল ষড়যন্ত্রকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এই প্রেক্ষিতে আজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল একপ্রকার পালটা জবাব।
বস্তুত, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজকের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ফের একবার রাজ্য বনাম কেন্দ্র সংঘাতের আবহ তৈরি হলো। তৃণমূল কংগ্রেস এদিনের মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে তাদের প্রশাসনকে দক্ষ, দায়িত্ববান এবং দ্রুত পদক্ষেপকারী হিসেবে তুলে ধরার কৌশল নিয়েছে, তা স্বাভাবিক ভাবেই অনুমেয়।