কলকাতা : রবিবার সন্ধ্যায় ঘন্টা দুয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর সেই সময়টুকুই মঞ্চে বরাদ্দ ছিল ভাস্কর শীর্ষ আচার্যর। ওই সময়ের মধ্যে মাটি দিয়ে তিনি তৈরি করলেন রামলালার আদলে মূর্তিশাস্ত্র অনুসারে ব্রোঞ্জের কীর্তির অনুকরণে রামমূর্তি। রামলালার উদ্বোধনের আগেই কলকাতা পেল পঞ্চচোলা ঘরানার ‘ধনুষপাণি রাম’।
শ্রী অযোধ্যা ধামে শ্রী রামচন্দ্রের প্রাণ প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম উপলক্ষে ভারতীয় জাদুঘরের পাশে আশুতোষ জন্মশতবর্ষ হলে রবিবার বিকেলে হল ‘নমামী রঘুবীরম’। ভারতীয় সংগ্রহশালা, কলকাতার পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র ও মৌলনা আবুল কালাম আজাদ ইন্সটিট্যুট অফ এশিয়ান স্টাডিজের সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল ‘সংস্কার ভারতী’।
ভারতীয় কারু ও চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের স্নাতক শীর্ষ আচার্য এই প্রতিবেদককে জানান, “গোটা বিশ্বেই এরকম তাৎক্ষণিক শিল্পকর্ম বিরলদ্রষ্ট। পশ্চিমবঙ্গে এ রকম ঘরানা অন্তত আমার জানা নেই। গত বাংলা নববর্ষে কলকাতার ইজেডসিসি-তে
‘সংস্কার ভারতী’-র উদ্যোগে একটা অনুষ্ঠান চলাকালীন শশাঙ্কের আড়াই ফুট উচ্চতার আবক্ষ মূর্তি তৈরি করেছিলাম।” গৌড় সাম্রাজ্যের সার্বভৌম নৃপতি ও বাংলা অঞ্চলে একীভূত রাষ্ট্রের প্রথম স্বাধীন রাজা ছিলেন শশাঙ্ক।
সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত এই প্রতিবেদককে জানান, ভারতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ মূর্তিটি তাঁদের সংগ্রহে রাখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। শীর্ষ জানান, মাটির মূর্তির ওপর ফাইবারের আস্তরণ (কাস্টিং) দিয়ে সেটি সংরক্ষণ করা যাবে।
একই সঙ্গে, এবার ওই অনুষ্ঠানস্থলেই এক ছাদের নিচে আগ্রহীরা রামচন্দ্রের ৫০ টি ছবি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। রবিবার, মানে অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধনের প্রাক্কালে কলকাতায় হল ‘রাম চরিতকথা‘ নামে এক প্রদর্শনীর উদ্বোধন। তিলক সেনগুপ্ত বলেন, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শিল্পীদের আঁকা রামচন্দ্রের ছবি ডিজিটাইজের পর প্রিন্ট নিয়ে ১৮ ইঞ্চি দীর্ঘ ও ১২ ইঞ্চি প্রস্থ পিচবোর্ডের ওপর স্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো লাগানো হবে ভারতীয় জাদুঘর সংলগ্ন আশুতোষ জন্মশতবর্ষ হলে। ১৭ থেকে ৭০ বছর বয়সের এই শিল্পীদের মধ্যে আছেন পশ্চিমবঙ্গের তিন জন। ২১ বিকেল সাড়ে চারটায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ন আর্টের ডিজি সঞ্জীব কিশোর গৌতম। যাঁদের আঁকা রামচন্দ্র দর্শকরা প্রদর্শনীতে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন, তিনি ছাড়াও তাঁদের মধ্যে আছেন ‘সংস্কার ভারতী’-র সর্বভারতীয় সভাপতি তথা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী বাসুদেব কামাথ।
এ ছাড়াও শিল্পীদের মধ্যে আছেন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনীল বিশ্বকর্মা, কাশ্মীরের অমরজিৎ সিং, উত্তরপ্রদেশের সুনীল খুসোয়া, লখনউয়ের জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী সুনীল কুমার সিং, গুজরাটের ডঃ অশোক প্যাটেল, জাতীয় পুরস্কার বিজয়িনী নিরুপমা টাঙ্ক, দর্শনা ভাদুরিয়া প্রমুখ ৩০ জন। প্রদর্শনী চলবে তিন দিন। সকাল ১১ টা থেকে বিকাল ৫ টা। কোন প্রবেশ মুল্য নেই। প্রদর্শিত ছবিগুলো নিয়ে একটা কফি বুক সংকলন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিলকবাবু।