দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ সন্দেশখালির পরিস্থিতি ঠিক কেমন? তা খতিয়ে দেখতে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার নেতৃত্বে মহিলা সাংসদদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল ৬ সদস্যের তথ্যানুসন্ধান দল। তাঁরা শুক্রবার সন্দেশখালি যাওয়ার পথে পুলিশি বাধার মুখে পড়লেন। রামপুরের কাছে ব্যারিকেড দিয়ে আটকানো হল নাড্ডার পাঠানো প্রতিনিধিদলকে। সেখানেই পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান মহিলা সাংসদরা। লেডি কনস্টেবলদের কাছে বারবার তাঁরা বলতে থাকেন, ”নিরাপত্তার প্রসঙ্গ যখন উঠছেই, তখন আপনারাই আমাদের নিয়ে চলুন। তাতে তো ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করা হবে না।” জবাবে মহিলা পুলিশ অফিসাররা জানান, ”সুপিরিয়রদের সঙ্গে কথা বলি, তাঁরা বললে তবেই যাওয়া যাবে।” উভয়ের বাকবিতণ্ডায় মুহূর্তে এলাকার পরিস্থিতি যথেষ্ট উত্তপ্ত।
বিজেপির প্রতিনিধি দলে রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী, প্রতিমা ভৌমিক-সহ অন্যান্যরা। বিধায়ক অগ্নিমিত্রা এবং সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতোও রয়েছেন তাঁদের সঙ্গে। অগ্নিমিত্রা পল বলেন, "শেখ শাহজাহানদের মতো দুর্বৃত্তদের দখলে চলে গেছে সন্দেশখালি। মহিলাদের শ্লীলতাহানি করছে তাঁরা। পুলিশ সব জেনেও চুপচাপ। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী নয়। বরং সন্দেশখালি তাদেরই দখলে থাকুক এমনটাই চাইছে প্রশাসন। অথচ আমরা নির্যাতিতা মায়েদের কথা শুনতে ঘটনাস্থলে যেতে চাইলে আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে।"
বিজেপির ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল নিউটাউন থেকে রওনা দেওয়ার আগে সন্দেশখালি প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অন্নপূর্ণা বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে যে ঘটনা ঘটেছে, কোনও সভ্য সমাজে তা ঘটে না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। তাঁর রাজত্বে এমন ঘটনা ঘটেছে এটা ভাবা যায় না। সরকার চায় না ওখানে কী হচ্ছে তা প্রকাশ্যে আসুক। কিন্তু আমরা নির্যাতিতাদের সঙ্গে কথা বলবই।’’
রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে অভিযুক্ত পলাতক শেখ শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সরদারকে গ্রেফতারের দাবিতে গত শুক্রবার থেকে উত্তাল হয়ে ওঠে সন্দেশখালি। একরকম গ্রামের মহিলারাই এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। হাতে লাঠি ঝাঁটা নিয়ে বিক্ষোভে সামিল হন তাঁরা। আন্দোলন মারমুখী চেহারা নেয় অচিরেই। জেলিয়াখালিতে শিবু হাজরার পোল্ট্রি ফার্মে লাঠি সোটা নিয়ে ঢুকে পড়েন গ্রামের মহিলারা। ভাঙচুর করে আগুনে পুড়িয়ে দেয় পোল্ট্রি ফার্ম। শিবুর বাগানবাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয় উত্তম সর্দারের বাড়িও। জনরোষের মুখে পরে উত্তমকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। গ্রেফতারও করা হয় এই তৃণমূল নেতাকে। তবে এখনও অধরা শিবু হাজরা।
সন্দেশখালির গ্রামে গ্রামে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ও তার অনুগামীদের বিরুদ্ধে মহিলাদের ভূরি ভূরি অভিযোগ। গত কয়েকদিন ধরে সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁরা লাগাতার অভিযোগ করতে থাকেন ভিটে-মাটি কেড়ে নিয়েই রেয়াত করেনি এই নেতারা। নিয়মিত তাঁদের শ্লীলতাহানি করেছে। বিনা পারিশ্রমিকে শ্রম দিতে বাধ্য করেছে। প্রতিবাদ করলেই জুটেছে মার। থানায় গেলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি ।
সন্দেশখালির মহিলাদের এই সমস্ত অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় হয় গোটা রাজ্য রাজনীতি। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা সন্দেশখালির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য বিজেপির সাংসদদের নিয়ে ছয় সদস্যের একটি দল গড়ে দিয়েছেন। তাঁরাই শুক্রবার সকালে সন্দেশখালিতে পৌঁছন।