দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তান নিজের কূটনৈতিক দিক ঘুরিয়ে আন্তর্জাতিক মুসলিম মহলকে আকৃষ্ট করতে তৎপরতা বাড়িয়েছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, এবং কূটনীতিক মহলে এসেছে ধারণা—এই জোট প্রয়োজনে মধ্যপ্রাচ্যে শক্তি সমন্বয়ের দিকে যেতে পারে।
চুক্তির প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক বিতর্কিত মন্তব্য করেন—“প্রয়োজনে সৌদি আরবকে আমরা আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচির সুবিধা দেওয়ার সুযোগ রাখবো।” এই বক্তব্যের ফলে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে; বিশেষ করে ইজরায়েল-মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তা দেখা দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এই ধরনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ নেয়, তা বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও অঞ্চলীয় শক্তি সমীকরণে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। দিল্লি, তেলআবিব ও ওয়াশিংটনসহ বিভিন্ন রাজধানী এ বিষয়ে সতর্ক নজর রাখছে বলে কূটনীতিক সূত্রগুলো মনে করিয়ে দিয়েছে।সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তান যে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে তার ভিত্তিতে, দুই দেশের কারও উপর যদি শত্রু হামলা হয়, তাহলে সেই হামলা দুই দেশের উপর হামলা বলে বিবেচিত হবে। একে অপরের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সামগ্রী বিনিময় করবে দুই দেশ। বৃহস্পতিবার রাতে এই চুক্তি প্রসঙ্গে পাক সংবাদমাধ্যম জিও টিভিকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ। সেখানেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, এই চুক্তির বলে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের প্রতিরোধ ক্ষমতা কী সৌদি আরবের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যাবে? উত্তরে আসিফ বলেন, “আমি পাকিস্তানের পরমাণু ক্ষমতার বিষয়ে একটি কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই যে, এই মারণাস্ত্র পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এই মহাশক্তির অধিকারী হয়েছি। আমাদের কাছে যা কিছু রয়েছে, যেটুকু ক্ষমতা রয়েছে তা এই চুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সৌদি আরবের কাছেও তা উপলব্ধ।”
উল্লেখ্য, গত বুধবার পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সৌদি আরবের প্রিন্স মহম্মদ বিন সলমনের প্রতিরক্ষা চুক্তি সাক্ষর হয়। এর পরই যৌথ বিবৃতি জারি করে জানানো হয়, “উভয় দেশের কারও বিরুদ্ধে যে কোনওরকম আগ্রাসনকে উভয়ের উপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে। বিবৃতি অনুসারে, এই চুক্তি সৌদি আরব এবং পাকিস্তানের মধ্যে প্রায় আট দশকের পুরনো ঐতিহাসিক অংশীদারিত্বের উপর ভিত্তি করে তৈরি। যা ভ্রাতৃত্ব এবং ইসলামী সংহতির বন্ধনের পাশাপাশি নিজেরদের কৌশলগত স্বার্থ এবং দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।
তবে এই চুক্তি ইজরায়েলকে নজরে রেখে সাক্ষর করা হয়েছে বলে অনুমান কূটনৈতিক মহলের। বর্তমানে মুসলিম রাষ্ট্রগুলির ত্রাস হয়ে উঠেছে ইজরায়েল। প্যালেস্টাইনের পাশাপাশি গত কয়েক মাসে তাদের হামলার মুখে পড়েছে ইরান, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এমনকী কাতারও। এই অবস্থায় বিশ্বের পরমাণু শক্তিধর একমাত্র দেশ হল পাকিস্তান। তারা যদি নিজেদের পরমাণু শক্তি সৌদি আরবের সঙ্গে ভাগ করে নেয় তবে মধ্যপ্রাচ্যে ইজরায়েলের জন্য তা নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে, পাকিস্তান ভারতের চিরকালিন শত্রু হলেও সৌদি আরবের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে ভারতের। এই চুক্তি ভারতের জন্যও যথেষ্ট চিন্তার।