দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: তিনি সেই মানুষ, যাঁর বাঁশির সুরে এক সময় কেঁপে উঠত উপমহাদেশ। 'কল অফ দ্য ভ্যালি'-র অমর স্রষ্টা। সুরের দেবতা। সেই পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া মঙ্গলবার রাতে দিল্লির কামানি অডিটোরিয়ামে উঠে এলেন মঞ্চে। প্রত্যাশায় উত্তেজিত শ্রোতারা — তাঁরা চেয়েছিলেন একবার শুধু তাঁকে দেখতে, আর একবার শুনতে তাঁর বাঁশির সুর। কিন্তু মঞ্চে বসে ফুঁ দিতে চাইলেন পণ্ডিতজি, আর সেই বাঁশি বাজল না।
প্রখ্যাত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর অনবদ্য সুরেলা বাঁশির স্বাদ গ্রহণ করতে অগণিত শ্রোতার ভিড় জমেছিল দিল্লির ঐতিহ্যশালী কামানি অডিটোরিয়াম। এমনকি গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এ অনুষ্ঠানের প্রচার চালিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম-টুইটার– প্রচার চলেছিল সর্বত্র। কানায়-কানায় পূর্ণ হলের দর্শকদের যে একটাই চাহিদা ছিল। পণ্ডিতজিকে চাক্ষুষ করা। তাঁর সুরধ্বনির সাক্ষী থাকা। তাই তো সন্ধে সাতটা থেকে নিঃশব্দে বসে ছিলেন দর্শকরা, কারও চোখে উত্তেজনা, কারও মুখে প্রত্যাশা। সময় গড়ায়, মিনিট পেরিয়ে ঘণ্টা… অবশেষে রাত ন’টার দিকে আলো ফেলে মঞ্চে পা রাখলেন পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া। সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েকজন সাথী। তারপর ধীরে ধীরে হাতে তুলে নিলেন চিরচেনা সেই বাঁশি। অডিটোরিয়ামজুড়ে নেমে এল নিঃশব্দ অপেক্ষা। সবাই যেন নিঃশ্বাস আটকে অপেক্ষা করছিলেন— ‘সুর’ আসছে… এখনই…কিন্তু হঠাৎই চিত্রটা বদলে গেল। বহুবার চেষ্টা করেও বাঁশি থেকে সুর বের করতে পারছেন না তিনি। কাঁপতে থাকা হাত বারবার বাঁশি সরিয়ে দিচ্ছে মুখ থেকে। প্রায় ১৫–২০ মিনিটের প্রাণপণ চেষ্টার পরেও সেই সুর এল না, যার জন্য অপেক্ষা করছিল গোটা অডিটোরিয়াম। প্রিয় শিল্পীর এমন অসহায় পরিস্থিতি দেখে দর্শকরা ধীরে ধীরে আসন ছাড়তে শুরু করেছেন। আর অন্যদিক, তখনও বাঁশিতে সুর তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া।
মঙ্গলবারের এই দৃশ্যের ভিডিও ভাইরাল সোশাল মিডিয়াতে। দর্শক আসনে ছিলেন লেখক তসলিমা নাসরিনও। নিজের সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে ঘটনা শেয়ারও করেছেন তিনি। তিনি আরও জানান, প্রায় দুই ঘণ্টা আগে থেকে অচেনা শিল্পীদের পারফরম্যান্স চলছিল, তার পরে মঞ্চে তোলা হয় পণ্ডিতজিকে। এবার প্রশ্ন উঠছে— যদি পণ্ডিতজির শারীরিক অবস্থা ভালো না ছিল, তাহলে তাঁকে দিয়ে পারফর্ম করানো হল কেন? এই প্রশ্নের কোনও জবাব এখনও মেলেনি। তাহলে কি হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়াকে সামনে রাখা হয়েছিল কেবল বাণিজ্যিক স্বার্থে? এ প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া যায়নি। বিতর্ক হচ্ছে দেখে মুখে কুলুপ এঁটেছে কামানি অডিটোরিয়াম কর্তৃপক্ষও।
প্রসঙ্গত, রাজ কাপুরের ছবির আবেগ হোক কিংবা শিবকুমার শর্মা-হরিপ্রসাদ যুগলের সুরময় যুগ — ৮০ ও ৯০ দশকের বলিউডে হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া ছিলেন এক অনন্য সুরশিল্পী। মঙ্গলবারের সন্ধ্যায় তিনি বাঁশিতে ফুঁ দিলেন, কিন্তু সেই বাঁশি বাজল না। অনেকের চোখে জল, অনেকের মনে প্রশ্ন। এই সন্ধ্যা শুধুই এক পারফরম্যান্স ব্যর্থতা নয়, যেন এক সঙ্গীতযুগ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাওয়া।
Yesterday at Delhi’s Kamani Auditorium, hearing Pandit Hariprasad Chaurasia’s flute left me heartbroken. He can no longer truly play. His hands tremble; the flute will not stay steady. He blows into it with immense effort, yet no music emerges.
— taslima nasreen (@taslimanasreen) August 27, 2025
The blame lies with the organizers.… pic.twitter.com/xwolZryndk