দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পরপর দু’টি বৈঠক। প্রথম বৈঠকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। কিন্তু দ্বিতীয় বৈঠকে আর দেখা যায়নি তাঁকে। এই দুই বৈঠকের মাঝেই ঘটে যায় নাটকীয় মোড়—মুখ্য সচেতকের পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। দিনের শেষে শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ঈশ্বর আমাকে রক্ষা করেছেন।’’
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা লোকসভার নবনিযুক্ত তৃণমূল দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলের বিভিন্ন স্তরের চার হাজার নেতা, জনপ্রতিনিধি ও পদাধিকারীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (এসাইআর)-র আবহে এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দলের সমস্ত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি, সাংসদ, বিধায়ক, পুরনিগমের মেয়র, ডেপুটি মেয়র, চেয়ারম্যান, পুরসভাগুলির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের সমস্ত সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের ওই বৈঠকে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। পাশাপাশি, দলের শাখা সংগঠনগুলির সভাপতি, মূল দলের রাজ্য কমিটির সকল সদস্য এবং কলকাতার সব কাউন্সিলরকেও থাকতে বলা হয়েছিল বৈঠকে। বীরভূম এবং উত্তর কলকাতার ক্ষেত্রে কোর কমিটির সমস্ত সদস্যকেও ডাকা হয়েছিল। এমন এক বৈঠকে সাংসদ কল্যাণ অনুপস্থিত থাকায় নানা মহলেই তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এই বৈঠক অভিষেক বেশ কিছু দিন আগেই ডেকেছিলেন। প্রথমে কথা ছিল ৮ অগস্ট এই বৈঠকটি হবে। পরে বৈঠকের তারিখ এগিয়ে ৫ অগস্ট করা হয়। সেই সময়ে তারিখের বিষয়েই কল্যাণের কোনও আপত্তির কথা জানা যায়নি। কিন্তু মঙ্গলবার তিনি ভার্চুয়াল বৈঠকে হাজিরাও দেননি। শ্রীরামপুরের সাংসদের কথায়, ‘‘আমি যে থাকতে পারব না, তা অভিষেককে জানিয়েছিলাম। অভিষেক বলেছে, ঠিক আছে।’’ কল্যাণের এই উত্তরেই স্পষ্ট যে, তিনি বৈঠকে থাকতে পারবেন না জানানোর পরে তাঁকে আর জোরাজুরি বা বিশেষ অনুরোধ করা হয়নি। বরং একবাক্যেই বৈঠকে না-থাকার ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার বিকেলেই কল্যাণের গলায় অভিমানের সুর শোনা গিয়েছিল। লোকসভায় দলের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের কাজ ঠিক মতো হচ্ছে না বলে জানিয়ে সেই বৈঠকে নিজের অসন্তোষ ব্যক্ত করেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যত ক্ষণ না শারীরিক ভাবে সুস্থ হচ্ছেন, তত ক্ষণ পর্যন্ত অভিষেক লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা হিসেবে কাজ করবেন বলে সেই বৈঠকেই মমতা ঘোষণা করেন। আর নিজেকেই মমতার ‘সমন্বয়’ সংক্রান্ত মন্তব্যের লক্ষ্য হিসেবে মেনে নিয়ে কল্যাণ লোকসভার তৃণমূলের মুখ্য সচেতক পদ থেকে ইস্তফা দেন। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘দলনেত্রী যখন মনে করছেন লোকসভায় সমন্বয় ঠিক মতো হচ্ছে না, তখন তিরটা আমার দিকেই আসছে। তাই আমি ইস্তফা দিচ্ছি।’’
কল্যাণের এই ইস্তফা প্রসঙ্গে তৃণমূলের তরফে সোমবার তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে তৃণমূলের সমাজমাধ্যম পেজ থেকে পোস্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, কল্যাণের ইস্তফা দলের চেয়ারপার্সন গ্রহণ করেছেন। তাঁর পরিবর্তে বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে মুখ্য সচেতক করা হয়েছে বলেও সেই পোস্টে জানানো হয়।