kolkata

4 hours ago

Durga Puja 20205: পুজোর আগে হোটেল বুকিংয়ের নামে ‘ফাইভ স্টার স্ক্যাম’, ফের সক্রিয় সাইবার জালিয়াতরা!

Five-Star Fraud
Five-Star Fraud

 

দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক:  পুজো আর হাতে গোনা আর কয়েকটা দিন। অনেকেই এখন ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। হোক দেশের ভিতরে বা বাইরের কোনও গন্তব্যে—হোটেল খোঁজ, টিকিট বুকিং, পরিকল্পনার ব্যস্ততা তুঙ্গে। আর এই সময়টাকেই কাজে লাগাচ্ছে সাইবার জালিয়াতরা। 'ফাইভ স্টার স্ক্যাম' নামে এক অভিনব প্রতারণা কৌশলে তারা সাধারণ মানুষকে লক্ষ লক্ষ টাকার ফাঁদে ফেলছে। শহরের পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা দপ্তর থেকে শুরু করে রাজ্য পুলিশের তরফে ইতিমধ্যেই সতর্কতামূলক প্রচার শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। 

সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। পর্ণশ্রীর এক বাসিন্দা পুরী বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনায় সাত হাজার টাকা দিয়ে অনলাইনে একটি হোটেল বুক করেছিলেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, সেই বুকিংয়ের নামেই প্রতারকরা তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে ধাপে ধাপে আদায় করে নিয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশের কাছে। এমনকি এখন বিদেশে হোটেল বুক করার সময়েও অনেকে একই ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এই নতুন জালিয়াতির নামই দিয়েছে পুলিশ—‘অনলাইন ফাইভ স্টার স্ক্যাম’। 

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যাচ্ছে, জালিয়াতদের মূল টার্গেট হচ্ছেন সেই সমস্ত মানুষ, যাঁরা অনলাইনে হোটেল খুঁজছেন বা বুকিংয়ের জন্য নামী হোটেলের ওয়েবসাইটে খোঁজ নিচ্ছেন। জালিয়াতরা আগে থেকেই তৈরি করে রাখছে ওই সব হোটেলের ভুয়ো ওয়েবসাইট। হুবহু আসল ওয়েবসাইটের মতো দেখতে, কিন্তু তাতে দেওয়া নম্বরে ফোন করলেই তারা ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। আবার অনেকে নিজেদের পর্যটন সংস্থা বা কোনও অভিজাত হোটেলের কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে সরাসরি ফোন করছেন ভুক্তভোগীদের কাছে। অনলাইনে, সোশ্যাল মিডিয়ায় কিংবা গুগলে হোটেলের খোঁজ করলেই পর্যবেক্ষণের আওতায় চলে আসছে সাধারণ মানুষ।  

জালিয়াতির কৌশল অত্যন্ত সূক্ষ্ম। অনেক সময় প্রতারকেরা প্রথমেই জানতে চায়, আপনি কোথায় ঘুরতে যাচ্ছেন। এরপরই তারা দাবি করে, বুকিং প্রক্রিয়া যাতে সহজ হয়, সেইজন্য তারা নিজেরাই ফর্ম পূরণ করে দেবে, দরকার শুধু একটি প্রাথমিক অগ্রিম। তারা পর্যটকের ফোনে পাঠিয়ে দেয় একটি QR কোড। সেই কোড স্ক্যান করতে বলা হয় এবং OTP জানাতে বলা হয় "কনফার্মেশনের" জন্য। মানুষেরা সহজে বিশ্বাস করে ফেলে। সেখানেই ঘটে সর্বনাশ। QR কোড স্ক্যান বা OTP শেয়ার করার পর মুহূর্তেই পর্যটকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে হাজার হাজার টাকা তুলে নেয় প্রতারকেরা।

গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্তার কথায়, "মানুষ এখনও এই ধরনের প্রতারণার কৌশল পুরোপুরি জানেন না। তাই খুব সহজেই ফাঁদে পড়ে যাচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি প্রতারণা হচ্ছে পুরী, দার্জিলিং, গোয়া, কাশ্মীর, বা থাইল্যান্ড, দুবাই, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি বিদেশি গন্তব্যে হোটেল বুকিংয়ের ক্ষেত্রে।" রাজ্য পুলিশ ও লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে সচেতনতামূলক প্রচার। সাধারণ মানুষকে বারবার বলা হচ্ছে—

• কোনও অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলে, তারা যদি নিজেদের হোটেল বা ট্যুর সংস্থার প্রতিনিধি বলে দাবি করে, তবে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হোন।

• QR কোড স্ক্যান করবেন না।

• OTP কাউকে শেয়ার করবেন না।

• হোটেল বুক করতে হলে হোটেলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়েই বুক করুন, সেটির ভেরিফায়েড অ্যাড্রেস ও নম্বর ক্রসচেক করুন।

• যদি সন্দেহ হয়, সংশ্লিষ্ট হোটেলের কাস্টমার কেয়ার নম্বরে ফোন করে তথ্য যাচাই করে নিন।

সাইবার সেল ও পুলিশের অভিমত, পুজোর মরসুমে সাইবার প্রতারণা সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায়। কেননা এই সময় একদিকে যেমন কেনাকাটার ধুম পড়ে, তেমনই বেড়ে যায় ট্র্যাভেল বুকিং। তাই প্রতারকদের কাছে এটাই ‘পিক সিজন’। পুলিশ মনে করছে, এই ধরনের প্রতারণা রুখতে হলে জনসচেতনতাই একমাত্র উপায়। তাই পুজোর আগে আরও জোরদার প্রচার চালানো হবে বলে তারা জানিয়েছে। এমনকি বিভিন্ন থানায় পোস্টার, স্থানীয় বাসিন্দাদের ওয়ার্কশপ, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেন চালানো হবে, যাতে মানুষ আগে থেকেই জানেন—এই ‘ফাইভ স্টার স্ক্যাম’-এর পেছনে লুকিয়ে আছে কতটা ভয়ানক ফাঁদ।


You might also like!