দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক : ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবু সোরেন প্রয়াত। দীর্ঘদিন ধরে কিডনির অসুখে ভুগছিলেন তিনি। দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছিল চিকিত্সা। অবস্থার ক্রমশ অবনতি হয়, এবং সোমবার সকাল ৮টা ৫৬ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৮১ বছরের এই বর্ষীয়ান রাজনীতিক। ঝাড়খণ্ডের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর ছেলে হেমন্ত সোরেন এক্স হ্যান্ডেলে বাবার মৃত্যুর খবর জানান। তিনি লেখেন, 'প্রিয় দিশম গুরুজি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আজ আমি সব কিছু হারালাম।'
শিবু সোরেনের রাজনৈতিক সফর:
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন শিবু সোরেন। গত ৩৮ বছর ধরে তিনি ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতা ছিলেন এবং দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও অভিভাবক হিসেবে সম্মানিত ছিলেন। শিবু সোরেন ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে তিন দফায় কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছয়বার লোকসভা সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৮০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত আটবার লোকসভায় প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়াও তিনি তিনবার রাজ্যসভার সদস্য হন। তিনি ১৯৮৭ সালে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার দায়িত্ব নেন এবং এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত জেএমএম-এর সভাপতি হিসেবে দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসেন।
শিবু সোরেনের জন্ম:
শিবু সোরেন ১৯৪৪ সালের ১১ জানুয়ারি, বর্তমান ঝাড়খণ্ডের নেমরা গ্রামে এক সাঁওতাল আদিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল রামগড় জেলায়, যা তখন বিহারের অংশ ছিল। যখন তিনি স্কুলছাত্র, তখন তাঁর বাবাকে মহাজনদের ভাড়াটে গুণ্ডারা হত্যা করে। এই ঘটনার পর থেকেই তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন এবং আদিবাসী অধিকার রক্ষার দৃঢ় প্রচারক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি জমির অধিকার ও জমিদারদের শোষণের বিরুদ্ধে সরব হন।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি ‘সাঁওতাল নবযুবক সংঘ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। পরে ১৯৭২ সালে তিনি বাঙালি বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন নেতা এ কে রায়ের সঙ্গে এবং কুরমি মাহাতো নেতা বিনোদ বিহারী মাহাতোর সঙ্গে মিলে ১৯৭২ সালে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা গঠন করেন। তিনি ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের আন্দোলনের প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন, যার ফলে ২০০০ সালে আলাদা রাজ্য হিসেবে ঝাড়খণ্ডের জন্ম হয়।
মুখ্যমন্ত্রী পদে শিবু সোরেন:
তিনি প্রথমবার ১৯৮০ সালে লোকসভায় নির্বাচিত হন দুমকা থেকে। পরে এই দুমকা কেন্দ্র ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) শক্ত ঘাঁটি হয়ে ওঠে। তবে ২০১৯ সালে তিনি এই নিজস্ব ঘাঁটি থেকেই পরাজিত হন, যখন বিজেপির নলিন সোরেন প্রায় ৪৫,০০০ ভোটে জয়ী হন।
শিবু সোরেন ২০০৫ সালে প্রথমবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু বিধানসভায় আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পারায় মাত্র ৯ দিনের মধ্যেই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়। পরে তিনি আগস্ট ২০০৮ থেকে জানুয়ারি ২০০৯ এবং ডিসেম্বর ২০০৯ থেকে মে ২০১০ পর্যন্ত। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তিনি একবারও পূর্ণ মেয়াদে (পাঁচ বছর) মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকতে পারেননি।
প্রধানমন্ত্রীর শোকবার্তা:
শিবু সোরেনের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি লেখেন, 'শ্রী শিবু সোরেনজি একজন মাটির মানুষ ছিলেন, যিনি মানুষের সেবা করার অটুট নিষ্ঠার মাধ্যমে ধাপে ধাপে উঠে এসেছেন। তিনি বিশেষ করে আদিবাসী সমাজ, গরিব ও পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নতির জন্য নিবেদিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে ব্যথিত। আমার সমবেদনা রইল তাঁর পরিবার ও অনুরাগীদের প্রতি। আমি ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী হেমন্ত সোরেনজির সঙ্গে কথা বলেছি। ওম শান্তি।'