দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে তুরস্কের ভারত-বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে ৷ ভারতের বিরুদ্ধে সংঘাতে পাকিস্তানকে ড্রোন দিয়ে সাহায্য করেছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী এর্দোগান ৷ এই অবস্থায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তুরস্ককে বয়কটের ডাক উঠেছে ৷ পর্যটন সংস্থাগুলি নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে ভারতীয়দের তুরস্কে যেতে নিষেধ করছে ৷ অন্যদিকে তুরস্ক থেকে ভারতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের সংখ্যাও কমতে বলে মনে করা হচ্ছে ৷
এই বয়কটের ফলে ভারতের পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি ? শুক্রবার দেশের পর্যটন শিল্পের বিশেষজ্ঞরা জানালেন, তুরস্ককে বয়টক করলে ভারতের পর্যটন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনও প্রভাব পড়বে না ৷ কারণ ভারতীয় পর্যটকরা এখন অন্য দেশগুলিতে যাওয়ার কথা ভাবছেন ৷ মরিশাস থেকে জর্জিয়া নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে ৷ তুরস্ক থেকে ভারতে ঘুরতে আসা পর্যটকের সংখ্যাও নগণ্য ৷
এই 'বয়কট তুর্কি' ট্রেন্ড নিয়ে একটি ভ্রমণ সংস্থার শীর্ষকর্তা রাজন সেহগাল ইটিভি ভারতকে বলেন, "বহু ভারতীয় পর্যটক তুরস্কে ঘুরতে যান ৷ তাই তুরস্কের একটা পর্যাপ্ত পরিমাণ রাজস্বের উৎস ভারত ৷ কিন্তু তুরস্কের ভারত বিরোধী অবস্থানের জন্য ভারতীয়রা সেদেশকে বয়কট করতে বাধ্য হয়েছেন ৷ এর ফলে 70 শতাংশ মানুষ তুরস্কে ঘুরতে যাওয়া বাতিল করেছে ৷"
তিনি আরও বলেন, "ভূমিকম্পের সময় ভারত ওদের সাহায্য করতে ছুটে গিয়েছিল ৷ তখন তারা পাকিস্তানকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল ৷ এবার পর্যটন সংস্থাগুলি এই দেশে পর্যটন বাণিজ্য করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ আর যদি তুরস্ক থেকে ভারতে আসা পর্যটকদের কথা ধরি, তাহলে তা উল্লেখযোগ্য কিছু নয় ৷ তাই তুরস্ককে বয়কট করলে ভারতের পর্যটন ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব পড়বে না ৷"
ট্যুর অপারেটদের একটি সংগঠনের সভাপতি রবি গোঁসাই-ও একই সুরে বললেন, "এই বয়কটে ভারতের কোনও ক্ষতি হবে না ৷ তুরস্ক থেকে ভারতে খুবই কম সংখ্যায় পর্যটক আসেন ৷ মানুষের আবেগ গুরুত্বপূর্ণ ৷ একাধিক ভ্রমণ সংস্থা তুরস্কের 40-50 শতাংশ বুকিং বাতিল করে দিয়েছে ৷"
ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্যুর অপারেটর্স (আইএটিও) একটি নির্দেশিকা জারি করেছে ৷ তারা সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছে, যে সব দেশ পাকিস্তানকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে ভারতের বিরুদ্ধে সাহায্য করছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া কূটনৈতিক পদক্ষেপ করুক ভারত সরকার ৷ আইএটিও চিঠিতে জানিয়েছে, "আইএটিও দেশের পাশে রয়েছে ৷ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনা বাহিনীর এই লড়াইয়ে তাদের সঙ্গে রয়েছে ৷"
সুভাষ গোয়েল বলেন, "ভারত পর্যটন শিল্পে যথেষ্ট ভালো জায়গায় রয়েছে ৷ এবার পর্যটকরা বিশ্বের অন্যান্য নিরাপদ জায়গাগুলিতে ঘুরতে যাবেন ৷ ইদানীং পর্যটকরা জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, মরিশাস এবং কিরগিজস্তানে যাচ্ছেন ৷" আরেক বিশেষজ্ঞ দীপক উপাধ্যায় বলেন, "বয়কট তুরস্ক ট্রেন্ড দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে ৷ পর্যটকরা অন্য অন্য জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন ৷"
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জবাবে গত 7 মে অপারেশন সিঁদুর চালিয়ে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) ন'টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করেছে ভারতীয় সেনা ৷ এর পাল্টা পাকিস্তান, ভারত সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণ রেখায় ঝাঁকে ঝাঁকে সশস্ত্র ড্রোন, আনম্যানড ভেহিকল (ইউএভি) পাঠিয়ে সেনা ঘাঁটি থেকে নাগরিক পরিকাঠামো ধ্বংসের চেষ্টা করেছে ৷ চার দিন ধরে এই হামলা প্রতিরোধ করেছে ভারতীয় সেনা ৷ সংঘর্ষ বিরতির পর ভারতের মাটিতে পাকিস্তানের পাঠানো ড্রোন, ইউএভি-র ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে তার মধ্যে তুরস্কের পাঠানোর ড্রোন, ইউএভি আছে ৷ এরপরই তুরস্কের ভারত-বিরোধী অবস্থানের জন্য ইস্তানবুলের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করেছে একের পর এক ব্যবসায়ী সংগঠন ৷ কোপ পড়েছে তুরস্ক পর্যটনেও ৷