Country

4 hours ago

Operation Mahadev: পাকিস্তানি পরিচয় স্পষ্ট নিহত জঙ্গিদের, গোয়েন্দা রিপোর্টে মিলল পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য!

Last rites of terrorist Tahir, killed in Operation Mahadev, held in Pakistan-occupied Kashmir
Last rites of terrorist Tahir, killed in Operation Mahadev, held in Pakistan-occupied Kashmir

 

দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: ‘অপারেশন মহাদেব’—গত সপ্তাহে শ্রীনগরের দাচিগাম অরণ্যে ভারতীয় সেনা এবং নিরাপত্তারক্ষীদের এক যৌথ অভিযানে মৃত্যু হয়েছে তিন জঙ্গির। এই অভিযানে নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় নিয়েই তৈরি হয়েছিল একাধিক প্রশ্ন। বিশেষ করে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদাম্বরম এই অভিযানে নিকেশ হওয়া জঙ্গিদের পরিচয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর প্রশ্ন ছিল, এরা কি পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে যুক্ত? এবং আদৌ কি এরা পাকিস্তানের নাগরিক? চিদাম্বরমের এই প্রশ্নের জবাবে এবং যাবতীয় সন্দেহ নিরসনে এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে প্রকাশ করা হল গোয়েন্দা রিপোর্ট, যা থেকে স্পষ্ট, নিহত তিনজনই পাকিস্তানি এবং লস্কর-ই-তইবার সক্রিয় সদস্য।

গত সোমবার শ্রীনগরের দাচিগাম জঙ্গলে সেনা ও পুলিশের যৌথ অভিযানে মৃত্যু হয় তিন জঙ্গির। সামরিকভাবে সফল এই অভিযানকে ‘অপারেশন মহাদেব’ নাম দেওয়া হয়। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একাধিক তথ্য সামনে আনেন। তিনি বলেন, নিহত জঙ্গিদের নাম সুলেমান, আফগান এবং জিবরান। তাঁদের কাছে পাওয়া গিয়েছে পাকিস্তানি ভোটার কার্ড, কিছু চকলেট এবং এমন কিছু সামগ্রী যা থেকে তাঁদের পাক নাগরিকত্বের প্রমাণ মেলে। তাছাড়া তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এগুলিই ব্যবহার হয়েছিল পহেলগাঁও হামলার সময়ে।

তবে শুধু মন্ত্রীর বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি কেন্দ্র। এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করল গোয়েন্দা সংস্থাগুলির যৌথ তদন্তে পাওয়া তথ্য। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, এই তিন জঙ্গির কাছে পাকিস্তানি চকলেট, ভোটার কার্ড ছাড়াও ছিল একটি মাইক্রো এসডি চিপ যাতে ছিল বায়োমেট্রিক ডেটা। চিপ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায়, তিনজনই পাকিস্তানের নাগরিক এবং প্রত্যেকে লস্কর-ই-তইবার সদস্য। সুলেমানের ভোটার কার্ডে দেখা যায়, তিনি পাকিস্তানের লাহোরের বাসিন্দা। আফগানের কার্ডে লেখা, তাঁর বাড়ি গুজরানওয়ালায়। তৃতীয় জঙ্গি জিবরানের কার্ড নিয়ে এখনও বিস্তারিত তথ্য সামনে আসেনি, তবে গোয়েন্দাদের হাতে থাকা অন্যান্য প্রমাণ থেকেও তাঁর পাকিস্তানি পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কাশ্মীর পুলিশের তরফে ভুল স্কেচ প্রকাশ করায় কিছু বিভ্রান্তি ছড়ায়। কিন্তু পরে গোয়েন্দা সংস্থাগুলির যৌথ অভিযানে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণে বোঝা যায়, ২৮ জুলাই দাচিগাম জঙ্গলে যে তিন জঙ্গিকে নিকেশ করা হয়, তারাই পহেলগাঁও হামলার মূল অভিযুক্ত। তাঁদের সঙ্গে মেলে হামলায় ব্যবহৃত একে-১০৩ রাইফেলের শেল কেসিংও।

রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালের মে মাসে গুরেজ সেক্টর দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে এই তিন জঙ্গি। সীমান্ত পেরোনোর পরে এক স্থানীয় সহযোগীর মাধ্যমে তারা আশ্রয় এবং রসদ পেতে থাকে। ওই ব্যক্তি পরে নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে এবং তারই তথ্যের ভিত্তিতে তিন জঙ্গির সন্ধান মেলে। হামলার একদিন আগে তারা বৈসরনের কাছে একটি কুঠুরিতে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে হেঁটে পহেলগাঁও পৌঁছে তারা নৃশংস হামলা চালায়। এরপর ফের ফিরে আসে দাচিগামের গভীর জঙ্গলে। দীর্ঘদিন ধরে সেখানেই গা ঢাকা দিয়ে ছিল। অবশেষে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও সেনার যৌথ অভিযানে তাদের নিকেশ করা সম্ভব হয়। 

অমিত শাহ স্পষ্ট ভাষায় জানান, “এরা কেউ কাশ্মিরি নয়। সকলেই পাকিস্তান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে এসেছিল। এবং তাঁদের কাছে পাকিস্তানি নাগরিকত্বের প্রমাণস্বরূপ ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে। এমনকী, চকলেটও পাকিস্তানি উৎপাদনের। পহেলগাঁও হামলায় ব্যবহার করা অস্ত্র মেলেই তাদের পাকিস্তানি জঙ্গি বলে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।” অন্যদিকে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও এই একই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। পাকিস্তানি ভোটার কার্ড, চিপে থাকা বায়োমেট্রিক ডেটা এবং অস্ত্র বিশ্লেষণ—সব মিলিয়ে ভারতের কাছে এখন অকাট্য প্রমাণ রয়েছে যে ‘অপারেশন মহাদেব’-এ নিহত তিন জঙ্গি পহেলগাঁও হামলার মূলচক্রী এবং তারা প্রত্যেকেই পাকিস্তান-ঘনিষ্ঠ লস্কর-ই-তইবার সদস্য। 

এই ঘটনার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং প্রতিরক্ষা দফতর আরও কড়া নজরদারির বার্তা দিয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিকে। ইতিমধ্যেই গোয়েন্দা তৎপরতা আরও বাড়ানো হয়েছে, বিশেষ করে লস্কর-ই-তইবার গতিবিধি ঘিরে। কারণ এটাই প্রথম নয়, যখন পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে জঙ্গিরা। কিন্তু এবার প্রমাণসহ সেই উপস্থিতি দেশবাসীর সামনে এসেছে—যা ভবিষ্যতের জন্যও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

You might also like!