দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক : পাশের রাজ্যের সমুদ্রতীরবর্তী শহর পুরীর সঙ্গে বাঙালির এক অটুট সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বহুদিন ধরে। দু’দিনের ছুটি পেলেই যেন মন ছুটে যায় পুরীর দিকে। কতবার যাওয়া হয়ে উঠেছে তা গোনার আর সময় নেই, তবু অবসর পেলেই সেই চেনা সমুদ্র, সেই পরিচিত জনপদের টান যেন আর সামলানো যায় না। পুরী যেন বাঙালির ভ্রমণপিপাসার এক চিরন্তন ঠিকানা।
পুরী কারও কাছে তীর্থক্ষেত্র, কারও কাছে নিছকই অবসরযাপনের স্থান। সমুদ্রস্নান, ভরপেট মাছ-ভাত খাওয়া আর সৈকতে ঘোরাঘুরি— এ নিয়েই কারও কারও পুরী ভ্রমণ দিব্যি কাটে। কেউ যান জগন্নাথ দর্শনে। সামনে রথযাত্রা—২৭ জুন শুক্রবার রথ, আর ৫ জুলাই উল্টোরথ। এই সময় লক্ষ লক্ষ ভক্ত ভিড় করেন রথের রশিতে টান দিতে বা রথারোহী ঠাকুরের এক ঝলক পাওয়ার আশায়। আপনি কি সেই সময় পুরী ভ্রমণের কথা ভাবছেন? এবার চেনা পথ ছেড়ে পুরীকে আবিষ্কার করুন একটু অন্য রকমভাবে—নতুন চোখে, নতুন অভিজ্ঞতায়।
পুরী ভ্রমণে এলে অধিকাংশ মানুষই স্বর্গদ্বারের আশপাশেই থাকতে বা সময় কাটাতে পছন্দ করেন। জায়গাটি সবসময়ই প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা থাকে। তবে যারা একটু নিরিবিলির খোঁজ করেন, তাদের কাছে গন্তব্য হয়ে উঠছে গোল্ডেন বিচ। 'ব্লু ফ্ল্যাগ' স্বীকৃত এই সৈকত পরিচ্ছন্নতা ও সাজানো-গোছানো পরিবেশের জন্য আগ্রহ বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে এখানকার সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ অরণ্য সৈকতের সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আর রথযাত্রার ভিড় এড়িয়ে যদি একটু শান্ত পরিবেশে সময় কাটাতে চান, তাহলে রামচণ্ডী সৈকতও হতে পারে এক আদর্শ বিকল্প।
পুরী থেকে কনার্কের দিকে যে মনোহর মেরিন ড্রাইভ রোড গিয়েছে সমুদ্রের পাশ ঘেঁষে, সেই পথ ধরেই পৌঁছাতে হয় রামচণ্ডী সৈকতে। যেখানে কুশভদ্রা নদীর জল ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় বঙ্গোপসাগরে, সেখানেই এই শান্ত অথচ সৌন্দর্যে ভরা সৈকতের অবস্থান। এখান থেকে ওয়াটার স্কুটারে ভেসে যাওয়া যায় এক বিস্তীর্ণ বালুচরের দিকে—যার এক পাশে নদীর শান্ত জল, অন্য পাশে গর্জন তোলা উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ। সেই বালু ভরানো প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায় অসংখ্য লাল কাঁকড়া, প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক নির্ভেজাল উপভোগ্য দৃশ্য।
সেই কাছেই রয়েছে দেবী রামচণ্ডীর মন্দির, যেটিকে ওড়িশার অন্যতম শক্তিপীঠ হিসেবে মানা হয়। যদিও স্থাপত্যে সূর্য মন্দিরের জাঁকজমকের ধারে কাছে নয়, ইতিহাস ও আধ্যাত্মিক গুরুত্বে রামচণ্ডী মন্দিরের অবস্থান অনেকটা আগে। মনে করা হয়, কনার্কের সূর্য মন্দিরেরও আগে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পুরী থেকে এটি প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং কনার্ক থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত—একদিনের ছোট্ট সফরে অফবিট ঘোরার এক আদর্শ জায়গা।
বলিহরচণ্ডী সৈকত:
ঝাউবনের মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে রাস্তা। সেই রাস্তা ধরে বেশ কিছুটা হাঁটলে পৌঁছনো যায় বলিহরচণ্ডী সৈকতে। পুরী থেকে কোণার্ক যাওয়ার পথেই পড়ে সৈকতটি। পর্যটকদের কাছে এই স্থান বিশেষ পরিচিত নয়। তবে স্থানীয় লোকজন এখানে পিকনিক করতে আসেন। বলিহরচণ্ডীর মন্দির রয়েছে সেখানেই। উপাস্য দেবতা হলেন হরচণ্ডী। সেখান থেকে ঝাউবনের মধ্যে দিয়ে বেশ কিছুটা হেঁটে পৌঁছনো যায় সৈকতে।
একম্রবন:
পুরী এলেও এই জায়গাটির নাম বোধ হয় শোনেননি। এটি রয়েছে ভুবনেশ্বরে। পুরী ভ্রমণের তালিকায় ভুবনেশ্বরও ঢুকে যায়। উদয়গিরি, খণ্ডগিরি, নন্দনকাননের নাম লোকে জানেন। কিন্তু এখানে পর্যটকেরা তেমন যান না। ২০০-এর বেশি ঔষধি গাছ নিয়ে তৈরি এই বাগান। ভিতরে রয়েছে জলাশয়। শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ। খুব সুন্দর করে সাজানো এই উদ্যান।
তাপাং:
ভুবনেশ্বর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে তাপাং ইদানীং পর্যটক মহলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জায়গাটি দেখলে ক্যানিয়ন মনে হতে পারে। আসলে এটি একটি পরিত্যক্ত খনি। খননকাজের পর বড় বড় গহ্বরে জল জমে হ্রদের আকার নিয়েছে। জায়গাটির সৌন্দর্যের জন্যই ক্রমশ পর্যটক মহলে এর সমাদর বাড়ছে।
মিউজ়িয়াম:
ওড়িশা আদিবাসীদের শিল্পকলা প্রদর্শনে তৈরি হয়েছে ট্রাইবাল আর্ট মিউজ়িয়াম। পুরী থেকে ভুবনেশ্বর ঘোরার পরিকল্পনা থাকলে তালিকায় রাখতে পারেন এটিও। বিভিন্ন মডেল, হাতের কাজ সেখানে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। আদিবাসীদের পোশাক, গয়না, দৈনন্দিন কাজের জিনিসও সেখানে প্রদর্শিত হয়েছে।