দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :কখনও ভেবেছেন কি, ফুটে থাকা ফুলও আমাদের জীবনের পাঠ শিখাতে পারে? নিজস্ব নিয়মে, নিজের রঙে বাঁচার শিক্ষা দিতে পারে? জাপান এমনই এক দেশ, যেখানে মানুষরা ফুলের সৌন্দর্য ও গুণ থেকে জীবনযাপন ও আদর্শের সংজ্ঞা খুঁজে নেয়, এবং দেশের জীবনধারা ও দর্শন নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে আগ্রহ জন্মেছে।
জাপানি দর্শনই বলছে 'ওবাইটোরি'-র কথা। যার অর্থ কারও সঙ্গে তুলনা না টেনে, নিজের শর্তে, নিজের মতো করে বেড়ে ওঠা। ওবাইটোরি মনে করে, একজনের সাফল্য দেখিয়ে তুলনা টানা আসলে এক জন মানুষের বা শিশুর প্রতিভাকে নষ্ট করে দিতে পারে।
জাপানের দর্শন যা বলছে, তা বলেন ভারতীয় মনোবিদেরাও। মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপ বার বার বলেন, শিশুর বেড়ে ওঠার সময়ে বা সন্তান বড় হয়ে গেলেও পরিবারের অন্য কাউকে দেখিয়ে সাফল্যের নিদর্শন তুলে ধরা বা তুলনা টানা অনুচিত। এতে শিশু নিজেকে আরও গুটিয়ে নিতে পারে।
অদ্ভুত ভাবে জাপান এই শিক্ষা নিয়েছে প্রকৃতির কাছ থেকে। ওবাইটোরি শব্দটি চেরি, প্লাম, পিচ এবং অ্যাপ্রিকট ফুল ফোটার ভাবনা থেকে গৃহীত। এই চার ফুল ফোটে বিভিন্ন ঋতুতে। প্রতিটি ফুলই নিজের মতো করে সুন্দর। তাদের প্রত্যেকের নিজস্বতা রয়েছে। ওবাইটোরি মনে করায়, প্রতিটি শিশু, প্রতিটি মানুষই স্বতন্ত্র। প্রত্যেকেই তার নিজের মতো করে সুন্দর। তাই অহেতুক কাজ বা সাফল্য নিয়ে তুলনা টানা অর্থহীন।
বাস্তবে চোখে রাখলে দেখা যাবে, প্রতি দিনই এই তুলনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে। শিশুরাও বাদ পড়ে না। অনেক তারকা সন্তানকেও এমন তুলনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যা তাঁদের কাছে বাড়তি চাপের কারণ হয়ে ওঠে।
অথচ প্রত্যেক শিশুই কিন্তু আলাদা পরিসরে বেড়ে ওঠে। তাদের বুদ্ধিমত্তা, ভাবনা, আদর্শ সবই আলাদা হয়। একই পরিবারে একই সঙ্গে বেড়ে ওঠা যমজ সন্তানদের মধ্যেও ভাবনা, স্বভাবে বিস্তর ফারাক থাকে। তাই প্রত্যেকের সাফল্যের সংজ্ঞাও আলাদা। গাছের বেড়ে ওঠার জন্য যেমন উপযুক্ত পরিবেশ দরকার, শিশুর বড় হওয়ার জন্যও ঠিক তাই। বেড়ে ওঠার সঠিক আবহাওয়া পেলে এক সময় সে তার মতো করেই সফল হবে।
কেন প্রাসঙ্গিক ওবাইটোরি?
সমাজমাধ্যমের যুগে অনেকেই তাঁদের সাফল্যের ছবি তুলে ধরেন। তা দেখেই কারও নিজেরই মনে হয়ে, ছোটবেলার বন্ধু আজ কোথায় পৌঁছে গিয়েছে, অথচ তিনি কোথায়! মনে মনে ঈর্ষা হয়, কারও আবার হতাশা আসে। পরিবারের অনেকে এ সব দেখেশুনে তুলনাও টানেন। বিশেষত পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফল না করলে বা ভাল কলেজে পড়ার সুযোগ না পেলে এমন তুলনার সম্মুখীন হতেই হয়। আসলে এই তুলনা যে কাউকে জীবনে এগিয়ে দিতে পারে না, বরং সময় এলে সাফল্য নিশ্চয়ই আসবে, এমন দর্শনকে উস্কে দেয় ওবাইটোরি।
কী ভাবে এই দর্শনকে জীবনে প্রয়োগ করবেন?
নিজেকে গ্রহণ: গুণ, খামতি দুই নিয়েই একজন মানুষ। প্রথমে কেউ যেমন, তেমন ভাবেই তাঁকে গ্রহণ করতে হবে। অনেকেই নিজেকে নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগেন। সেই ভাবনা থেকে বেরোতে হবে।
গুণের পরিচর্যা: প্রত্যেকরই কোনও না কোনও গুণ থাকে। নিজের ক্ষমতাগুলি বুঝতে হবে। সেই গুণগুলির বিকাশে মন দিলেই আত্মিক উন্নয়ন সম্ভব। একই ভাবে অভিভাবকদেরও সন্তানের ইতিবাচক দিকগুলি চিহ্নিত করে তাকে এগিয়ে যাওয়ার পথে সাহায্য করতে হবে।
জীবনের প্রাপ্তিগুলিকে উপভোগ করতে পারা বড় ক্ষমতা। অন্যকে দেখে ঈর্ষান্বিত হওয়া নয়, বরং নিজের ভাললাগাগুলিকে নিয়ে কী ভাবে জীবনে এগোনো যায়, সেগুলি থেকে সাফল্য আসতে পারে, তা নিয়ে ভাবতে হবে।