দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আকাশপথে হামলা চালালো রাশিয়া। কিয়েভ জানিয়েছে, এই হামলায় ৪০০-রও বেশি ড্রোন ও অন্তত ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এত বড় মাত্রায় হামলা এই প্রথম, বলে দাবি ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর। রুশ বাহিনী মূলত কামিকাজে ড্রোন, ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইলের সমন্বয়ে একযোগে আক্রমণ চালিয়েছে। হামলার লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরের বিদ্যুৎকেন্দ্র, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও সামরিক ঘাঁটি সম্পূর্ণরূপে গুঁড়িয়ে দেওয়া।
এই হামলায় প্রায় সমগ্র ইউক্রেনই আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে কিয়েভ, লভিভ এবং সুমি সহ নয়টি অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ।ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় থাকলেও এত বড় আকারের আক্রমণ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ে। কিয়েভ শহরে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়, বহু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়,এই হামলায় ৮০ জন আহত হয়েছেন এবং কেউ কেউ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকতে পারেন। দুর্ভাগ্যবশত, এই হামলায় কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে কিয়েভে তিনজন অগ্নিনির্বাপক, লুটস্কে দুইজন বেসামরিক ব্যক্তি এবং চেরনিহিভে একজন ব্যক্তি রয়েছেন।
রাশিয়ার এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক পোস্টে বলেন, 'আজ আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও শহরে সারাদিন উদ্ধার ও জরুরি অভিযান অব্যাহত ছিল। ৪০০-র বেশি ড্রোন, ৪০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে রাশিয়া। এতে ৮০ জন আহত হয়েছেন এবং কেউ কেউ এখনও ধ্বংসস্তূপের নীচে রয়েছেন।' তিনি আরও বলেন, 'দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বিশ্বের সবাই এ ধরনের হামলার নিন্দা করে না। পুতিন ঠিক সেটাই কাজে লাগিয়েছেন। তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের জন্য সময় কিনছেন।'
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম CNN সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন ইউক্রেনের রাজধানী কিভে মধ্যরাতে ড্রোন ও ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র-সহ ভয়াবহ হামলা চালায় রুশ সেনা। এই প্রত্যাঘাতে মৃত্যু হয়েছে চার জনের। অবশ্য, এই মৃত চার ব্যক্তি সেনা নাকি সাধারণ মানুষ সেই তথ্য পাওয়া এখনও সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি, আহত হয়েছেন ৪০ জনের উপর।
কিভের মেয়র ভিতালি ক্লিতসকো আলজাজিরাকে জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল থেকে উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে গিয়েছে। হামলার প্রভাব রাজধানীর একাধিক জায়গায় পড়েছে। ইতিমধ্যেই ১৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে প্রশাসন। পাশাপাশি, ইউক্রেনের প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছেন, এদিন মোট ৪০৭টি ড্রোন ও ৪৫ মিসাইল নিয়ে হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া।
হামলার বিষয়ে জেলেনস্কি আরও বলেন যে, 'রাশিয়ানরা তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ক্রমাগত বিশ্বের ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করে চলেছে। আমাদের এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে দেখতে হবে। কূটনীতিক ভাবে কাজ করতে হবে, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন প্রাথমিক পদক্ষেপ, বিশেষ করে যুদ্ধবিরতি। রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইউক্রেনের অপারেশন স্পাইডারওয়েবের কথা উল্লেখ করে বলেছে, কিয়েভের 'সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের' জবাব হিসাবে এই হামলা চালানো হয়েছিল।
এই হামলা শুধু ইউক্রেন নয়, গোটা বিশ্বকেই আবার মনে করিয়ে দিল যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহতা কমেনি, বরং প্রতিদিন আরও জটিল হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক মহল রাশিয়ার এই আচরণের নিন্দা করেছে এবং ইউক্রেনের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে।
Today, rescue and emergency operations continued all day across various regions and cities of our country.
— Volodymyr Zelenskyy / Володимир Зеленський (@ZelenskyyUa) June 6, 2025
Over 400 drones, more than 40 missiles were launched by the Russians. 80 people were injured, and some may still be under the debris. And unfortunately, not everyone in the… pic.twitter.com/NaKk8B8AZO