নয়াদিল্লি, ১৯ জুন : প্রায়শই তিক্ত অভিজ্ঞতার পরে জীবনের দিক পরিবর্তন হয় এবং অবস্থা বদলে যায়। কিছু মানুষ এটিকে ইতিবাচকভাবে নেয়। তখন যেমন এদের জীবনেও উন্নতি হয়, পাশাপাশি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে নিজেদের মতো নিপীড়িত মহিলাদের সাহায্য করতেও শুরু করে। কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের সহায়তায় পরিচালিত ইন্দোরের ওয়ান স্টপ সেন্টারে এমন নিপীড়িত মহিলাদের অনেক অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী পাওয়া যায়। রেখার (নাম পরিবর্তিত) গল্পটিও অনুপ্রেরণার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। চার বছর আগে, ৩৬ বছর বয়সী রেখার স্বামী তাকে রাস্তায় ফেলে দেয় মৃত্যুর জন্য। তিনি বলেন যে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা মধ্যরাতে তাঁর স্বামীর সাথে তাঁকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। করোনার কঠিন সময় ছিল তখন। আহত রেখা কোনওভাবে ইন্দোরের বিজয়নগরের ওয়ান স্টপ সেন্টারে পৌঁছেছিলেন এবং তাঁকে সাত দিনের জন্য চিকিৎসা সুবিধা সহ আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। তিনি আইনি সহায়তা এবং পরামর্শও পেয়েছিলেন। এরপর, ছয় মাসের প্রশিক্ষণের পর তাঁকে একটি এনজিওতে চাকরি দেওয়া হয়। আজও আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রেখা। এখন শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দ্বারা নির্যাতিত হওয়া নারীদের সাহায্য করছেন রেখা। তিনি তাদের শক্তি দিচ্ছেন, মনোবল বৃদ্ধি করছেন। রেখা বলেন যে, নারীরা তাদের সম্পর্ক বাঁচাতে গিয়ে প্রায়শই ভুলে যান যে তাঁদেরও অস্তিত্ব আছে, মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। হয়রানি সহ্য করলে সমস্যার সমাধান হয় না, তাই সবার আগে নারীদের নিজেদের শক্তিশালী করে তোলা উচিত এবং এই শিক্ষাই তিনি এখন দিচ্ছেন।
হর্ষিতা (নাম পরিবর্তিত) তাঁর এক মাস বয়সী শিশু কন্যাকে নিয়ে এই কেন্দ্রে আসেন। তার নিজের এবং সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন যে, কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য তাঁর স্বামী তাঁকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন। দুই বছর আগে বিয়ে করে যে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন তা এখন ভেঙে যাচ্ছে। হর্ষিতা বলেন যে, এখন তাঁকে নিজের এবং মেয়ের যত্ন নিতে হবে। অর্থনীতিতে এমএ পাশ হর্ষিতা। এখন তিনি তাঁর সঙ্গে হওয়া অবিচারের সুবিচার এবং মেয়ের জন্য ন্যায়বিচার চান। হর্ষিতা চান পুনরায় সংসার ফিরে পেতে। আশা করেন, তাঁর সব যেন ঠিক হয়ে যায়। এই আশা নিয়ে তিনি গত এক মাস ধরে এই কেন্দ্রে আসছেন এবং আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন। হর্ষিতা আশা করেন যে একদিন তাঁর স্বামী অবশ্যই এই কেন্দ্রে আসবেন এবং সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
বছর পঞ্চাশের কৌশল্যাও ন্যায়বিচারের জন্য ওয়ান স্টপ সেন্টারে আসেন। এই বয়সেও তাঁর স্বামী তাঁকে প্রতিদিন মারধর করেন। পরিচারিকার কাজ করে যা কিছু তিনি উপার্জন করেন তা কেড়ে নেন এবং তাঁকে ঘর থেকে বের করে দেন। স্বামীর এই অত্যাচারে ক্লান্ত হয়ে তিনি এখন সাহায্যের জন্য ওয়ান স্টপ সেন্টারে আসছেন। কৌশল্যা বলেন যে সন্তানরাও বড় হয়ে গেছে। প্রতিদিন মারধর সহ্য করারও একটা সীমা আছে। তিনি কেবল আশা করেন যে একদিন তার জীবনে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। নির্যাতিত নারীদের এমন অনেক ঘটনা প্রতিদিন এখানে শোনা যায়। ওয়ান স্টপ সেন্টারের প্রশাসক ডঃ বঞ্চনা সিং পরিহার বলেন, নির্ভয়া তহবিল থেকে যখন দেশজুড়ে নিপীড়িত মহিলাদের জন্য ওয়ান স্টপ সেন্টার শুরু হচ্ছিল, তখন ইন্দোরেও একটি কেন্দ্র চালু করা হয়েছিল। 'ওয়ান স্টপ সেন্টার' ২০১৬ সাল থেকে এখানে কাজ করছে। এই কেন্দ্রটি মূলত গার্হস্থ্য হিংসা এবং মহিলাদের হয়রানি প্রতিরোধের জন্য পরিষেবা প্রদান করে। কেন্দ্রে মহিলাদের আশ্রয়, চিকিৎসা সহায়তা, আইনি সহায়তা, পুলিশি সহায়তা এবং কাউন্সেলিং একই জায়গা থেকে প্রদান করা হয়। তিনি বলেন যে এখনও পর্যন্ত মোট ১৫,৬৮৩টি ঘটনা 'ওয়ান স্টপ সেন্টার'-এ এসেছে সাহায্যের আশায়, যার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ মামলার সমাধান করা হয়েছে। তিনি জানান যে ইন্দোরের ওয়ান স্টপ সেন্টার পারিবারিক হিংসার শিকার মহিলাদের পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণও দিয়েছে, তাদের মুদ্রা ইত্যাদির মতো স্বরোজগার যোজনায় সংযুক্ত করা, তাদের চাকরি দেওয়া, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় নথি তৈরি করা, আর্থিক সহায়তা প্রদান করা ইত্যাদি। মহিলা ও শিশু উন্নয়ন বিভাগের ইন্দোরের যুগ্ম পরিচালক ডঃ সন্ধ্যা ব্যাস বলেন, গত কয়েক বছরে মহিলারা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন। গত নয় বছর ধরে ওয়ান স্টপ সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে, যেখান থেকে নারীরা শুধু সকল ধরণের সহায়তাই পাচ্ছেন না, বরং তাদের স্বাবলম্বী করার জন্যও কাজ করা হচ্ছে। পারিবারিক হিংসার শিকার নারীদের পারিবারিক হিংসা সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান, সাফল্য এবং পুনর্বাসনের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বিভাগটি মহিলাদের ইচ্ছা এবং যোগ্যতা অনুসারে তাঁদের সকল ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কাজ করে, তাই ইন্দোরের ওয়ান স্টপ সেন্টার অন্যান্য রাজ্যগুলিকেও অনুপ্রাণিত করছে। উল্লেখ্য, ওয়ান স্টপ সেন্টার নিপীড়িত নারীদের সমন্বিত সাহায্য এবং সহায়তা প্রদান করে। এটি চিকিৎসা সহায়তা, আইনি সহায়তা এবং পরামর্শ, সাময়িক আশ্রয়, পুলিশি সহায়তা এবং নিপীড়িত মহিলাদের মানসিক সহায়তার মতো পরিষেবা প্রদান করে। বর্তমানে সারা দেশে ৮০২টি ওয়ান স্টপ সেন্টার কাজ করে চলেছে।